শেখ দিদারুল আলম, ইউএনবি: খুলনায় অটোরিকশা এবং মোটরচালিত তিন চাকার যানে ব্যবহৃত তিন লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারির এসিড, সিসা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলো মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুলনার ইজিবাইক কল্যাণ সমিতি ও ইজিবাইক চালক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন খুলনা শহরে প্রায় ২৫ হাজার ইজিবাইক এবং প্রায় ১১ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। এসব যানবাহন সচল রাখার জন্য ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ইজিবাইকে ৫টি ও রিকশায় ৪টি করে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়, যা সঠিকভাবে চলাচল করলে সর্বোচ্চ আট মাস চলতে পারে। এরপর আর চার্জ ধরে রাখতে পারে না। তাই বছরে একটি ইজিবাইকে ৭টি ব্যাটারি এবং রিকশায় ৬টি ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। অথাৎ ২৫ হাজার ইজিবাইকে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ব্যাটারির ও ১১ হাজার রিকশায় প্রায় ৬৬ হাজার ব্যাটারি প্রয়োজন হয়।
প্রতি বছর ইজিবাইক ও রিকশা থেকে প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি বের হচ্ছে। যা প্রতিদিন নগরীর অলিগলিতে গড়ে ওঠা ব্যাটারির দোকানে বিক্রি হচ্ছে। জনবসতি এলাকায় এ সকল ব্যাটারি অবৈধভাবে ভেঙে সিসা, এসিডসহ নানা উপকরণ বের করা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ভাঙারি হিসেবে তা বিক্রি হয়। পরে তা উচ্চ তাপে গলিয়ে সিসা সংগ্রহ ও বেশি দামে বিক্রি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব সিসা বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। আর সালফিউরিক এসিডসহ অন্যান্য রাসায়নিক মাটি ও পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
ইজিবাইক মালিক আরমান মুন্সী বলেন, বছরে কখনও ৬টি কখনও ৭টি ব্যাটারি লাগে। এগুলো নষ্ট হলে শেখপাড়া ব্যাটারিপট্টি বা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি ৯৫-১০০ টাকা বিক্রি হয়। একটা ব্যাটারিতে ১৮-১৯ কেজি ওজন হয় বলে তিনি জানান।
ব্যাটারি ব্যবসায়ী সোলেমান বলেন, খুলনায় ইজিবাইককে কেন্দ্র করে ছোট-বড় ৫শ’ ভাঙারি দোকান গড়ে উঠেছে। আমরা ব্যাটারি কিনে সিসা বের করে স্থানীয় ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করে থাকি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র রসায়নবিদ কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ব্যবস্থাপনার সঠিক পন্থা অনুসরণ না করায় মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারির সিসা ও অন্যান্য রাসায়নিক সরাসরি পরিবেশের সঙ্গে মিশছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাদ্যচক্রের মাধ্যমে পরে তা মানবদেহে ঢুকে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস ও কিডনিতে বিভিন্ন জটিল রোগ তৈরি হচ্ছে। এটি শিশুদের জন্য আরও বিপজ্জনক। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোনো নীতিমালা দেশে নেই। সাধারণ বর্জ্যের মতো ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষণের নতুন ঝুঁকি হয়ে উঠছে এসব ব্যাটারি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক দীলিপ দত্ত বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারির এসিড, সিসা, পরিবেশের জন্য যতটা না বিপজ্জনক, তার থেকে বেশি বিপজ্জনক মানবদেহের জন্য। এতে থাকে সালফিউরিক এসিডসহ অন্যান্য রাসায়নিক সিসা। এসব সিসা বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকে মানুষের মস্তিষ্কের সব থেকে বেশি ক্ষতি করে। প্রতিবন্ধী এবং ক্যান্সারও হতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। এটা পরিবেশ এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় যেসব জনবহুল এলাকায় এ সকল ব্যাটারি ভাঙা হচ্ছে এবং যারা ব্যাটারির এসিড ও সিসা ড্রেনে ফেলছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সূত্র: ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।