নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউপির পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামে গণপিটুনিতে আব্দুর রহমান (৪০) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা চিরিরবন্দর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশী হয়রানি এবং গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে এবং জনশূন্য পরিবেশ।
জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি গভীর রাতে ওই এলাকার পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক হোসেন আলীর বাড়িতে তিন চোর প্রবেশ করে। এ সময় গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে চোর সন্দেহে আটক একজনের ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়।
পরদিন সকালে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশ লাশের সন্ধানে গ্রামজুড়ে তদন্তে নামে। একপর্যায়ে দিনাজপুর জেলাধীন চিরিরবন্দর উপজেলার ঠাকুরেরহাট জোতরঘু এলাকায় ডালিয়া ক্যানেলে লাশের সন্ধান পায়।
পরে চিরিরবন্দর পুলিশ ক্যানেল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে। নিহত আব্দুর রহমান পঞ্চগড় জেলা শহরের চানপাড়া এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে দিনাজপুর জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- বোতলাগাড়ি ইফপিরপশ্চিম বালাপাড়ার হোসেন আলীর স্ত্রী তাহেরা বেগম (৪০), তার ছেলে খায়রুল ইসলাম (৩০) ও আব্দুর রহমানের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২৪)।
এদিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম জুড়ে বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা। খোঁজাখুজির পর এলাকায় দেখা মিলল কয়েকজন বয়স্ক নারী, শিশু ও স্কুল পড়ুয়া তরুণের সঙ্গে। তাদের সবার চোখে মুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ।
গ্রামের বয়স্ক নারী রশিদা বেগম ও পারুল বেগম নামের দুই গৃহবধূ জানান, এই গ্রামের মানুষ সবজি চাষ, অটোরিকশা ও ভ্যান চালানোর পেশায় জড়িত। ঘটনার পর থেকে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্ন হচ্ছে। তাদের স্বামীরাও গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বোতলাগাড়ীর নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, মামলার আসামি হিসেবে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ থাকায় সাধারণ মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে গ্রেফতার আতঙ্কে নারী- পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ওসি আবুল হাসনাত খান জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল যদিও সৈয়দপুর, কিন্তু মরদেহ উদ্ধার হয়েছে পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর থানা এলাকায়। তাই মামলাটি ওই থানা তদন্ত করছে। তবে তারা সহায়তা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চিরিরবন্দর থানার এসআই তাজুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার ৩ জন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে দিনাজপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কেউ গ্রাম ছাড়া হলে ধরে নিতে হবে সে অপরাধে জড়িত থাকতে পারে। তবে নির্দোষ নিরীহ মানুষের ভয়ের কিছু নেই। তারা নির্ভয়ে নিজ বাড়ি ঘরে থাকতে পারেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।