জুমবাংলা ডেস্ক : হঠাৎ করেই মাংসের বাজারে হইচই শুরু হয়েছে। ক্রেতারা ভিড় করছেন গরুর মাংসের দোকানে। ঢাকায় কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকারও নিচে। হঠাৎ গরুর মাংসের দাম কমা নিয়ে বিক্রেতা ও অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় গরুর মাংসের মতো উচ্চমূল্যের প্রোটিন কেনার সামর্থ্য সংকুচিত হয়ে আসছে সাধারণ মানুষের। এই কারণে গরুর চাহিদার চেয়ে জোগানও বেড়ে চলছে। ফলে বাধ্য হয়েই গরুর মাংসের দাম কমিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঢাকায় কয়েকদিন ধরেই ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতান। সেখানে দীর্ঘলাইন ধরে ক্রেতারা গরুর মাংস কিনছেন।
খিলগাঁও বাজারেও ৬০০ টাকা করে বিক্রি করেছে এক কেজি মাংস। বাসাবো-কদমতলা বাজারসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানেও ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে গরুর মাংস। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দাম কমার কারণে এখন আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে গরুর মাংস বিক্রি। এতদিন দাম নাগালের বাইরে থাকায় মানুষ গরুর মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তাই তাদের তেমন বিক্রিও হয়নি।
খলিল গোস্ত বিতানের কসাই কালু বলেন, মানুষ তো ৮০০ টাকা করে কিনতে পারতো না। এখন দাম কমেছে তাই মানুষের ভিড়ও অনেক। খিলগাঁও বাজারের আরেকটি দোকানের বিক্রেতা মিজানুর বলেন, যখন দাম ৭৫০ টাকা ছিল তখন প্রতিদিন ১০০-১২০ কেজি মাংস বিক্রি করতাম। এখন ৩০০-৪০০ কেজি করছি। সিয়াম মাংস বিতানের মঞ্জু বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে। আমরা হাড্ডি, চর্বি ও মাংস মিক্সড করে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ক্রেতাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু ও মাংস
মাংস ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুসারে, ৫৫০-৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির শুরুটা হয়েছিল কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। সেখানে একজন খামারি কসাইয়ের কাছে গরু বিক্রির বদলে নিজেই কম দামে মাংস বিক্রি শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি পুরান ঢাকার বংশাল, মালিবাগ ও রায়েরবাজারে মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এখন চোরাই পথে ভারতীয় গরু দেশে ঢোকার কারণে মাংসের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে দাম নির্ধারণ না করে দিলে মাংসের বাজার আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বদলেছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস
প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে গরুর মাংস। বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে দাম নিয়ে নয়ছয় করত। ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি করপোরেশন মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে এসে সে দাম দাঁড়ায় ৮০০ টাকা। এভাবে বছর বছর দাম বাড়তে থাকায় অনেক মানুষের খাদ্যতালিকা থেকে গরুর মাংস উঠে যায়, বদল আসে খাদ্যাভ্যাসে। এতে চাহিদাও কমে যায়।
গরুর মাংস সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় অনেকে খাদ্যাভ্যাস বদল করেছে বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘মাংসের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যার কারণে মানুষ গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যাভ্যাস বদলে মানুষ বিকল্প খাবারের দিকে ঝুঁকেছে। এখন দাম কমেছে এটা স্বস্তির খবর। আমরা আশা করব কম দামে যেন মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকে।’
হাটে কমেছে গরুর দাম
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের আইমান অ্যাগ্রো ভেটের মালিক আলী আজম রহমান শিবলী বলেন, আগে গরুর মাংসের মণ ২৫ হাজার টাকা ধরে হাটে গরু বিক্রি হতো। এখন তা ২১ হাজার টাকা ধরে বিক্রি হয়। এটার কারণ হচ্ছে, কোরবানির অনেক গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এই সময়ে পিকনিক, বিয়েসহ নানা রকম অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এগুলো হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি, কিন্তু চাহিদা কম। বাজারে গরুর খাবারের দামও কিছুটা কমেছে। এসব কারণে গরুর দাম কমেছে।
দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি
মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দাম বেঁধে দেওয়ার দাবি উঠেছে আবারও। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার মাংসের বাজারে অভিযান পরিচালনা না করায় ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশিমতো দাম নির্ধারণ করে। এখনো একেক এলাকায় একেক দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকা বেঁধে দেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও, এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন মাংসের দাম নির্ধারণ না করলে আবারও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় খামারি ও মাংস ব্যবসায়ীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় চলে আসবে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।