রংপুর প্রতিনিধি: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সমাহিত করার জন্য রংপুরে তার নির্মানাধীন বাসভবন পল্লী নিবাসের লিচুবাগানে কবর খননের কাজ শেষ হয়েছে।
সোমবার বিকালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা কবরের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়ে খনন কাজ শুরু করেন। শেষ হয় রাত পৌনে ৮টার দিকে। বৃষ্টিতে যাতে এরশাদের জন্য খোড়া কবরে পানি ঢুকতে না পারে, সেজন্য ত্রিপল দিয়ে কবর ঢেকে রাখা হয়েছে।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হোসেন লুসিড জানিয়েছেন, এরশাদ স্যারের পল্লী নিবাস ক্যাম্পাসের ভেতরে গড়া পিতা মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতলের লিচু বাগানের উত্তরপূর্ব পার্শ্বে সমাধির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি কর্মী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, আশরাফ আলী ও রোকনুদ্দিন, জাকির হোসেন ও সবুজ আহমেদ কবরটি পুরোপুরি প্রস্তুত করেছেন।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফী জানান, পল্লী নিবাস ক্যাম্পাসের লিচু বাগানটি স্যারের আগ্রহে তৈরি হয়েছে। তিনি নিজেই গাছ লাগিয়েছেন। রংপুর আসলেই ভোরে তিনি গাছে পানি দিতেন। পরিচর্যা করতেন। সেখানেই তিনি সমাহিত হবেন।
এদিকে, রংপুর জাতীয় পার্টির নেতারা এরশাদের জন্য পল্লী নিবাসে কবর খুরে প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত তাকে কোথায় দাফন করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
রবিবার সকালে এরশাদের মৃত্যুর পর সাবেক এই সেনাপ্রধানকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্ত্রী রওশন এরশাদ চান তার স্বামীকে ঢাকায় দাফন করা হোক। দলের নেতাকর্মীদের দাবি, এরশাদকে দাফন করা হোক উন্মুক্ত কোনো স্থানে; যেখানে তারা অবাধে যেতে পারবেন। আর রংপুরের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রংপুরে এরশাদের স্বপ্নের বাসভবন পল্লী নিবাসে তাকে সমাহিত করতে চাচ্ছেন।
আজ সকাল ১১টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসে অবতরণ করবে। সেখান থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশবাহী গাড়িতে করে সোজা জানাযা স্থল রংপুর ঈদগাহ মাঠে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি জানান, গাড়িতেই থাকবে মরদেহ, কাচের ঢাকনার ওপর দিয়ে এক নজর দেখার ব্যবস্থা করা হবে। বাদ জোহর জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা জানিয়েছেন, এরশাদকে কোথায় দাফন করা হবে, তা মঙ্গলবার সিনিয়র নেতারা বসে চূড়ান্ত করা হবে।
রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, যেকোনো মূল্যে তাঁরা এরশাদকে রংপুরে দাফন করবেন। যদি জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ রংপুর থেকে ঢাকায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করবে।’
তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদ তাঁকে পল্লী নিবাসে দাফনের কথা জানিয়েছিলেন। সুতরাং আমরা তাঁকে রংপুরের বাইরে কোথাও দাফন করতে দেব না।
সিটি মেয়র অভিযোগ করে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ থেকে এরশাদকে বিচ্ছিন্নসহ দলকে নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা উত্তর এলাকার মানুষ কাউকেই এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’
রবিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এরশাদ। ওইদিনেই তাঁর প্রথম জানাযা ঢাকার সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হয়। সোমবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার টানেল ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাযা হয়। এরপর তাঁর মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে এরশাদের মরদেহ নেওয়া হবে রংপুর। সেখানে বাদ জোহর চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।