জুমবাংলা ডেস্ক : পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে তেলে ভাজা খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। সাধারণ তেলে ভাজা এসব খাবারে শারীরিক ক্ষতি কিছুটা কম থাকলেও একই তেল বারবার ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে পুড়ে যাওয়া তেল, ঘি, ডালডা ব্যবহার করে মুখরোচক এসব খাবার তৈরি করছেন জানিয়ে প্রতিবেদন করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ।
বেসরকারি গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা বলছে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় সিঙ্গারা, সমুচা, জিলাপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন খাবার তৈরিতে খরচ কমানোর জন্য একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়।
এ কারণে এসব খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই ট্রান্সফ্যাটই মূলত হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। বাংলাদেশেও প্রতিবছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এর বড় একটি কারণ ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাটের বিসমিল্লাহ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে খোলা টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছোলা ভুনা, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, জালি কাবাবসহ ইফতারসামগ্রী। পাশেই জিলাপি ভাজা হচ্ছে।
কর্মচারী জানালেন, এই তেলে সকাল থেকে চপ, পেঁয়াজু জিলাপি ভাজা হচ্ছে। ভাজা হলে তেল ফেলে দেবেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেল কেউ ফেলে দেয়? এই তেলের মধ্যে আবার তেল দিয়ে আগামীকাল ভাজায় ব্যবহার করা হবে।’
গুলশানের শাহজাদপুরের বাঁশতলা মসজিদ মার্কেটে আল-বারাকা রেস্তোরাঁ। হোটেলটিতে সুমন নামের একজন জিলাপি ভাজছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘তেল আজকেই দিছি।
কড়াইয়ের নিচে কালোর জন্য তেল কালো দেখা যাচ্ছে।’ তবে বেঁচে যাওয়া তেল পরের দিনের জন্য রেখে দেবেন বলে জানালেন তিনি।
দোকান থেকে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা ইফতেখার আলম বলেন, ‘জানি ভাজা পোড়া খাওয়া উচিত নয়, কিন্তু বাসায় এগুলো না নিয়ে গেলে ইফতারে কেমন যেন অপুর্ণতা থেকে যায়।’
রোজার শুরু থেকেই ইফতারের খাদ্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সচেতন করতে কাজ করছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) একাধিক টিম। যারা রাজধানীর চকবাজার, গাউছিয়া, মিরপুর, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন দোকান মনিটরিং করে। তারা পোড়া তেলের ব্যবহার, খাবার ঢেকে না রাখা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে শুধু সতর্ক করছে। জেল-জরিমানার মতো কোনো ঘটনা নেই।
বাজার মনিটরিং করা বিএফএসএর সহকারী পরিচালক দিপু পোদ্দার বলেন, ‘অনেক জায়গায়ই ইফতারি ঢাকা অবস্থায় নেই। পোড়া তেল ও ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একই তেল বারবার ব্যবহারের কারণে ট্রান্সফ্যাট নামের চর্বি জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ট্রান্সফ্যাট হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বদহজম সৃষ্টি করে। এসিডিটি বেড়ে যায়।’
ডা. লেলিনের পরামর্শ, সারা দিন রোজা রেখে ভাজা-পোড়া খাবার কম খেতে হবে। হজমে সহায়ক খাবার যেমন ফল বা সিদ্ধ করা খাবার খাওয়া নিরাপদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।