নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সদর উপজেলায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বীজ বর্ধন খামারের ভিতরের অর্ধ শতাধিক শতবর্ষী ফলবান গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিনে ১৩/১৪টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে জেলার পরিবেশবাদীরে মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার উত্তর পাশে ভবানীপুর মৌজার তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বীজ বর্ধন খামারের ভিতরর কিছু জমি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কে বরাদ্ধ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বিনা সেখানে গামা রেডিয়েশন, এক্সপেরিমেন্টাল সেন্টার স্থাপন করবে। এজন্য তাদের জন্য বরাদ্ধ করা জমির ভিতরে থাকা ৫৪টি শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলছে।
বিনা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের ভবানিপুরে বিনা আঞ্চলিক গামা গবেষণা কেন্দ্রের মাঠের চারদিকে থাকা ৪১টি কাঁঠাল গাছ, নয় টি আম গাছ, একটি শিমুল গাছ, তিনটি তালগাছ সহমত ৫৪টি শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার জন্য তারা গত ১৬ অক্টোবর গাছ বিক্রয় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ভান্ডার কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটির সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম গাছ কাটার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে সারাদিন ১৩-১৪ টি গাছ কেটে ফেলা হয়।
বিনার কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জমিটি আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জমি বরাদ্ধ নিয়েছি। বিনার আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়িত হবে। আমরা বিদেশে যে সকল কৃষিজাত পচনশীল পণ্য রফতানী করা হয়, সেসব পন্য এখানে গামা রেডিয়েশন দিয়ে বিদেশে রফতানী করা হবে। এ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমরা সীমানার ভিতরের ৫৪টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ জন্য বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতি নেয়া হয়েছে।
গাছ কাটার বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক হাসান খান বলেন, এত পুরনো ও প্রাচীন ফরবান গাছ গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, যা খুই পীড়া দায়ক। তিনি বলেন, গাছগুলো না কেটে কিভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষেল নজর দেয়া প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, আমি যতটুকু জানি, গাছ কাটার একটি পদ্ধতি রয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার সভাপতি এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গাছ কাটা অনুমতি দেওয়া হয়। এ কমিটি কিভাবে অনুমতি দিল তা বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর শাখার যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, যেন গাছগুলো না কাটা হয়। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে চায় না। গাজীপুরের বনভূমি উজার হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা, আর এখানে গাছ কাটা হচ্ছে, সরকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, গাজীপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্প। তাই আমরা ৫৪টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছি।
বিনার গামা রেডিয়েশন, এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প স্থাপনের জন্য আমরা ২২ দশমিক ৫ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছি। তার মধ্যে ৩ একর জমির মধ্যে গামা রেডিয়েশন সেন্টার ও বাকী জমিতে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এখানে রেডিয়েশন নিয়ে কাজ করা হবে। এজন্য এটি সংরক্ষিত এলাকা হবে।
তিনি আরো বলেন, এখান থেকে কৃষিজাত পন্য যেমন আলুতে একবার রেডিয়েশন দিলে ৫/৬ মাস আলু নষ্ট হবে না। এজন্য গাছগুলো না কেটে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য সকল নিয়মে মেনে গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।