জুমবাংলা ডেস্ক : বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লিভার ক্যানসার। লিভার ক্যানসার সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে, লিভারের কাজ কী কী। পাকস্থলির পাশে আর মধ্যচ্ছদার নিচে ফুটবল আয়তনের একটি অংশ থাকে, যাকে লিভার নামে অভিহিত করা হয়। লিভারের এত কাজ যে বলে শেষ করা যাবে না। এটি রক্তের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি তৈরি করে পিত্তরস, যা পরিপাকতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ লিভার ক্যানসারের আক্রান্ত। এই ক্যানসার শুরু হয় লিভারে আর এরপর ছড়িয়ে পড়তে পারে দেহের অন্য অংশে, যেমন– মলাশয়, মলান্ত্রে।
লিভার ক্যানসার কী
যখন লিভারের কোষে ডিএনএ–তে পরিবর্তন ঘটে, তখন লিভার ক্যানসারের সূচনা হয়। কোষের ডিএনএ–এর কাজ হলো বংশগতির ধারা বজায় রাখা। এটি কোষের সব ধরনের কার্যকলাপের নির্দেশ প্রদান করে। ডিএনএ–তে যদি কোন কারণে মিউটেশন হয়, তাহলে ডিএনএ–এর নির্দেশের পরিবর্তন ঘটে। ফলে লিভারের কোষগুলো বাড়তে থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত কোষের এই বাড়তে থাকা এক সময় গঠন করে টিউমার বা ক্যানসার কোষ। যাদের লিভার ডিজিজ হয়, তাদের বেশির ভাগের এই লিভার ক্যানসার হয়ে থাকে। আবার অনেকের এমন অন্তর্গত রোগ ছাড়াও লিভার ক্যানসার হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারের উপসর্গ আগে থেকে বুঝতে পারা যায় না।
লিভার ক্যানসারের কারণ
১. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লিভার ক্যানসার হতে পারে।
২. লিভার সিরোসিস হলে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়।
৩. বংশে কারও এ রোগের ইতিহাস থাকলেও লিভার ক্যানসার হতে পারে। যেমন: উইলসন্স ডিজিজ বা হেমোক্রোমাটোসিস।
৪. ডায়াবেটিস থাকলে হতে পারে লিভার ক্যানসার।
৫. দীর্ঘসময় ধরে টক্সিনযুক্ত ভেজাল খাবার খেলে এই ক্যানসার হতে পারে।
৬. বহু বছর ধরে অতিরিক্ত মদ্যপান করলে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
লক্ষণ
১. ওজন হ্রাস পাবে।
২. খিদে বা রুচি কমে যাবে।
৩. পেটের ওপরের দিকে ব্যথা করবে।
৪. বমি বমি ভাব হবে।
৫. পেট ফুলে যেতে পারে।
৬. সাধারণ দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ দেখা দেবে।
৭. চোখ ও দেহ হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে।
৮. পেটের ওপর বৃহৎ শিরা দৃশ্যমান হতে পারে। এ ছাড়া পেটে কালশিটে দাগ বা রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে।
কীভাবে নির্ণয় করা যাবে
রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায় লিভারে সমস্যা আছে কিনা। আর রোগ নির্ণয় হলে পরের পদক্ষেপ হল লিভারের ক্ষতির মাত্রা ও পরিধি পরিমাপ করা।
প্রতিরোধ
১. হেপাটাইটিস বি ও সি প্রতিরোধে আছে হেপাটাইটিস বি টিকা।
২. সার্জারি ও রক্ত গ্রহণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৩. নাক ফুটো করা ও ট্যাটু করাতে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
৪. যৌনতা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
৫. ওজন বেশি হলে কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
৬. মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করতে হবে।
৭. অনেক বছর ধরে ফেলা রাখা আচার বা বাদামে থাকে আলফা টক্সিন। এসব খাওয়া উচিত না।
৮. বাইরের ভেজাল তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।
৯. হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া জরুরি।
১০. স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার খেতে হবে। যকৃতে যেন চর্বি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।