অনেকটা গোপনীয়তার সাথেই দাফন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আব্দুল মাজেদকে। রোববার ভোরে শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের সম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর স্কুলের পাশের কবরস্থানে লোক চক্ষুর আড়ালে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এটি তার শ্বশুরবাড়ি।
সোনারগাঁও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, মাজেদের দাফন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয়ভাবে করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়নি। সকালে তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জানতে পেরে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। জানতে পারেন রাত তিনটায় পর মাজেদের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় কেরাণীগঞ্জে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগারে। এটিই এই কারাগারে প্রথম ফাঁসির ঘটনা।
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বরখাস্ত ক্যাপ্টেন মাজেদের লাশ ভোলার মাটিতে না পাঠানোর দাবি জানান ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। একই দাবি করেন ভোলার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরও কয়েকজন নেতা ও স্থানীয়রা। এতে লাশ দাফনে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
জেল সুপার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘ফাঁ’সি কার্যকরের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। সে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবদুল মাজেদের পরিবারের কাছে তার লা’শ হস্তান্তর করা হয়। তবে লা’শ দা’ফ’নে স্থানীয়দের ক’ঠোর আপত্তি থাকায় ভোলার প্রশাসন কোনও ধরনের ঝুঁ’কি নিতে রাজি হয়নি। সে কার’ণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাজেদের লা’শ শশুরবাড়ি সোনারগাঁওয়ে দা’ফ’ন করা হয়।’
এর আগে শনিবার বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি বরখাস্ত ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার লা’শ ভোলার মাটিতে না পাঠানোর দাবি জানান ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। শনিবার বিকালে তার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ দাবি জানান তিনি।
প্রায় সাড়ে চার দশক আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ’ত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণের দায়ে ক্যাপ্টেন (চাকরিচ্যূত) আব্দুল মাজেদের মৃ’ত্যুদ’ণ্ড কার্যকর করা হয় ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কা’রাগা’রে এই ফাঁ’সি কার্যকর করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নতুন স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কা’রাগা’রে এটিই প্রথম ফাঁ’সি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হ’ত্যা মা’ম’লায় মোট ৬ জনের ফাঁ’সি কার্যকর হলো। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃ’ত্যুদ’ণ্ড কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। পলা’তক রয়েছেন খন্দকার আব্দুর রশিদ, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে কারা কর্তৃপক্ষ মাজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মোবাইলে ফোন করে শেষ দেখা করার তথ্য জানায়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর মাজেদের স্ত্রী ডা. সালেহা বেগম, মাজেদের এক ভাই, এক বোন ও একজন ভাতিজাসহ ৫ জন কা’রাগা’রে দেখা করেন।
গত ৮ এপ্রিল মৃ’ত্যর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রা’ণভিক্ষা চান আব্দুল মাজেদ। প্রা’ণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রা’ণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেয়ার পর সেই চিঠিটি কেন্দ্রীয় কা’রাগা’রে পৌঁছায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।