আলফাজ সরকার : পরিবারে যার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা- তিনিই প্রতিদিন কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে বিনা ভাড়ায় বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন।
শিক্ষানুরাগী এই ব্যক্তির নাম রতন মিয়া। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার-ইজ্জতপুর রুটের ‘যাত্রীসেবা পরিবহন’ অটোচালক।
গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা ও শ্রীপুরের শেষ সীমানায় একটি বনের ভেতর বসবাসরত সফিজ উদ্দিনের দেওয়া ছাপড়া ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন রতন মিয়া (৩৫)।
জানা যায়, শিশু বয়সে শিক্ষক বাবা আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর অভাবের সংসারে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কেটেছে রতন মিয়ার। কাজের সন্ধানে ২৫ বছর আগে এসেছেন গাজীপুরে। দু‘মুঠো ভাতের জন্য নানা ধরনের কাজও করেছেন রতন। অবশেষে এনজিওর ঋণের টাকায় কেনা অটো চালিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে চলছে তার সংসার।
কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করলেও বাদ দেননি মানবসেবা। দীর্ঘদিন ধরেই তার গাড়িতে কোনো শিক্ষার্থী উঠলে নিচ্ছেন না কোনো ভাড়া। শুধু তাই নয়, অটোর সামনে লিখে দেওয়া হয়েছে- ‘শিক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি ভাড়া ফ্রি’। বিগত ৫ বছর ধরে এ সেবা দিয়ে আসছেন রতন মিয়া।
রোববার দুপুরে জানিয়েছেন এমন উদ্যোগের পেছনের গল্প। এ সময় অশ্রু টলটল চোখে তিনি বলেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে পিতৃহারা হয়ে অর্থের অভাবে শিক্ষা বঞ্চিত হয়েছি। তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার মতো কেউ যেন আর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। এজন্যই বিনা ভাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের বহন করি। তাদের যত মাইল দূরেই যাত্রা হোক না কেন, ভাড়া লাগবে না।
অভাবের সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও রতনের এমন মহৎ কাজে খুশি তার স্ত্রী মাসুদা আক্তারও। মাসুদা বলেন, অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘরে কষ্টে বসবাস করলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বামীর এমন ত্যাগে আমি তৃপ্তি পাই।
রতনের এমন মহৎ সেবায় তার প্রতি ভালোবাসার কথা জানালেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। স্থানীয় এক হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাসুম বিল্লাহ বলেন, রতনের এমন কাজে আল্লাহ উনাকে অবশ্যই জাজাকাল্লাহ খাইরান দান করবেন। বর্তমান সময়ে রতনের মতো বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এমন রতন জন্ম হোক এটাই কামনা করি।
ইজ্জতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিনা আক্তার জানায়, রাস্তায় পেলে আমাদের ডাক দিয়ে তার গাড়িতে উঠিয়ে নেন রতন কাকু। ভাড়া দিলেও নেন না।
নলজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আলামিন জানায়, রতন মামার গাড়ি দিয়ে ৩ বছর ধরে চলছি। মামা খুব আদর করেন আমাদের।
আলম মোল্লা নামে এক অভিভাবক বলেন, রতন নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও ছাত্রছাত্রীদের বিনা ভাড়ায় স্কুলে যেতে সহযোগিতা করে, যা মহৎ কাজ। তার থেকে শিখলাম যে, যার যা আছে তা দিয়েই মানবসেবা করা যায়।
শিক্ষানুরাগী রতন মিয়ার এমন ত্যাগের প্রশংসা করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমীন বলেন, শিক্ষার প্রসারে এটি অবশ্যই একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। রতনের ছেলে-মেয়েকে আমার সাধ্য অনুযায়ী পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করব।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুরাদ আলী বলেন, এটাই মানবিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। সমাজকে আলোকিত করতে রতনের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সূত্র : যুগান্তর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।