বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে একদিকে যেমন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ তেমনি এর প্রভাবে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে। চাকরির বাজারও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারি এই কয়েক মাসে শিখিয়ে দিচ্ছে কম জনশক্তি নিয়ে কীভাবে বেশি কাজ করানো যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানা কাজে দক্ষ এবং যেকোনো ধরনের কাজ করার মানসিকতা রয়েছে, তাদের আগামী দিনে চাকরি পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
শুধুমাত্র করোনার কারণেই গত মার্চ মাস থেকেই দেশে একে একে স্থগিত হয়েছে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই বললেই চলে। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
চাকরির বাজার নিয়ে সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। চাকরির বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে কমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ কম ছিল। গত এপ্রিলে কমেছে ৮৭ শতাংশ। এপ্রিলে পোশাক ও শিক্ষা খাতে ৯৫ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। উত্পাদনমুখী শিল্পে ৯২ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে চাকরি কমেছে ৮১ শতাংশ। তথ্য-প্রযুক্তিকে আগামী দিনের সম্ভাবনা হিসেবে ধরা হলেও সেখানে চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৮২ শতাংশ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৬৪ শতাংশ।
দেশের চাকরির বড় ওয়েব পোর্টাল বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর গণমাধ্যমকে জানান, গত বছরের তুলনায় বিডিজবসে এপ্রিলে প্রায় ৮০ শতাংশ, মে মাসে ৭০ শতাংশ ও জুন মাসে ৫০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে। ২০২০ সালটা খুব বেশি ভালো যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নতুন নিয়োগ তো দিচ্ছেই না; বরং লোকবল কমাচ্ছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুযোগটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত চার মাসে সরকারি ও বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টারের (ব্যান্সডক) সায়েন্টিফিক অফিসার ও অ্যাকাউন্টস অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ২০ মার্চ। ৩৫ পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন ৫০ হাজার। একই দিনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১১ ক্যাটাগরির মোট ৪৫ পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন ৩৫ হাজার। খাদ্য অধিদপ্তরের এক হাজার ১০০ পদের জন্য আবেদনকারী ছিলেন ১৫ লাখ। মার্চ-এপ্রিলে এ পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা ছিল। দুদকের বিভিন্ন পদের পরীক্ষাও আটকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগও করোনায় আটকে আছে। গত ১৫ ও ১৬ মের ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এতে ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুটি বিসিএস ও ১০টি নন-ক্যাডারসহ মোট ১২টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব পরীক্ষার আয়োজনের সুযোগ নেই।
তবে করোনার মধ্যেও ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। এই বিসিএসে উত্তীর্ণদের থেকে নন-ক্যাডার পদের জন্য আবেদন গ্রহণও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও করোনার কারণে ফল প্রকাশ স্থগিত রয়েছে। ফলে অপেক্ষায় আছেন ২০ হাজারের বেশি প্রার্থী। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এ বছরের এপ্রিলের শেষে হওয়ার কথা ছিল। এতে অংশ নিতে আবেদন করেছেন চার লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত, যারা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। যদিও বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরো বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।