শীতকালে শীত লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। শীত সবার কাছে খুপ প্রিয় না। বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য শীত অভিশাপের মতো। আবার শীতে অনেকে খুব সহজে কাবু হয়ে যায় যে কারণে শীত পছন্ত করে না।
শীত কালে যদি অন্যদের চেয়ে আপনার বেশী শীত লাগে বা , তাহলে তা কিন্তু একটু চিন্তারই, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। কারণ, শরীরে যদি অন্য কোনো রোগ বাসা বেঁধে থাকে, তাহলে তুলনামূলক বেশি ঠাণ্ডা অনুভব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন রোগের কারণে শীতকালে অন্যদের থেকে বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে।
- ডায়াবেটিস এমন একটি মারাত্মক অসুখ, যা শুধুমাত্র কিডনিতেই প্রভাব ফেলে না শরীরে রক্ত সঞ্চালনেও খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই যারা এ রোগে আক্রান্ত তাদের অন্যদের তুলনায় শীতকালে বেশি ঠাণ্ডায় কাবু হতে দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের শীতে বেশি ঠাণ্ডা লাগা, কাশি কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসেও সমস্যা দেখা দেয়।
- শরীরে যদি সঠিক মাত্রায় রক্ত না থাকে, তাহলে তা থেকে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়রনের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলেই অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শীতকালে ঠাণ্ডাও বেশি লাগে। পুরুষের তুলনায় নারীরা অ্যানিমিয়াতে বেশি ভোগেন।
- নিয়ম ছাড়া লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে মেটাবলিজম কমে যায়। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ে। যা শরীরকে ঠাণ্ডা করে দেয়।
- শরীরে যদি ভিটামিন বি এর ঘাটতি দেখা যায়, তাহলে ঠাণ্ডা লাগা, ক্লান্তি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং খিদে চলে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ডিম, দুধ, পনির ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখলে ভিটামিন বি এর ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
- স্নায়ুর সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদেরও শীতকালে ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এর সঙ্গে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, চোখ জ্বালা করার সমস্যাও থাকে।
বেশিরভাগ সময় শীত অনুভূত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
তবে শীতের সময় কিংবা গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে অন্যদের চাইতেও বেশি শীত অনুভূত হওয়ার নানান স্বাস্থ্যগত কারণ থাকতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সব ঋতুতেই বাড়তি শীত অনুভূত হওয়ার সম্ভাব্য কিছু কারণ।
রক্তশূন্যতা: শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাব হওয়াকে বলা হয় ‘অ্যানিমিয়া’ বা রক্তশূন্যতা। যে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির বেশি শীত অনুভূত হতে পারে। লোহিত রক্তকণিকার কাজ হল পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা। তাই কোনো কারণে শরীরে এর অভাব দেখা দিলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে। ফলে শীত লাগবে বেশি।
‘অ্যানিমিয়া’ হওয়ার একটি বড় কারণ হল শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহ নেই। অথবা লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণ হতে পারে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ‘ইনফ্লামেইটরি বাওয়েল ডিজিজ’, রক্তক্ষরণ, গর্ভধারণ ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, তাই ঠাণ্ডা লাগে বেশি।
হাইপোথাইরয়েডিজম: এই রোগে ‘থাইরয়েড’ গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘থাইরয়েড’ হরমোন তৈরি করতে পারে না। এই হরমোন শরীরের হজমক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ‘থাইরয়েড’ হরমোনের অভাব থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে শীত বেশি অনুভূত হয়। ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’য়ের অন্যান্য উপসর্গের মাঝে আছে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, হতাশা, শুষ্ক ত্বক, অবসাদ ও অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি।
ঘুম ঘুমভাব: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঘুম বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। ঘুমের অভাব থাকলে তা শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা ২৪ ঘণ্টার স্বাভাবিক নিয়মে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। যে কারণে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হয়। তাই সবসময় যদি শীত অনুভূত হয় তবে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি ওজন কমা: অভ্যন্তরিন তাপমাত্রা বজায় রাখতে শরীর ব্যবহার করে চর্বি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে যারা অনেকটা ওজন কমিয়েছেন তাদের এসময় বেশি শীত অনুভব হতে পারে। তবে সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। খাদ্যাভ্যাসে ক্যালরির পরিমাণ কম হলে বিপাকক্রিয়া মন্থর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সমস্যা দেখা দেয়। খাওয়াজনীত যে কোনো জটিলতা থাকলে তাদেরও বেশি শীত লাগার সমস্যা হতে পারে।
‘রেইনাড’স ডিজিজ’: এটি একটি দুর্লভ রক্তনালীজনীত রোগ, যে কারণে তাপমাত্রা কমে গেলে রক্তনালী সরু হয়ে যায়। স্বভাবতই, এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ঠাণ্ডা লাগবে বেশি। অনেকসময় আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পা ঠাণ্ডায় নীলবর্ণ হয়ে যায়, সেখানে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় বোধশক্তি হারিয়ে যায়। শুধু আবহাওয়া নয়, মানসিক চাপের কারণেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই বেশিরভাগ সময় এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।