জুমবাংলা ডেস্ক : অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বুধবার হাইকোর্টে এক শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, তারা চান সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দগুলো বাদ দেওয়া হোক।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রশ্নে রুল শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দগুলো বাদ দেওয়া হোক… ‘গণতন্ত্র’, ‘সমাজতন্ত্র’ নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির মূলনীতি হতে পারে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘‘দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান৷ আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাইছি।”
২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়৷ এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের বেশ কিছু বিষয় ফিরে আসে৷ ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন সময়ে সংবিধানের কয়েক দফা সংশোধন হয়৷ প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং আট অনুচ্ছেদে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং আট অনুচ্ছেদে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বাদ দেয়া হয়।
বর্তমান সংবিধানের প্রস্তাবনায়রয়েছে বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম। (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে)। আর ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে রাখা হয়েছে৷ বলা হয়েছে , প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে আছে: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আরো পরিবর্তন আসে সংবিধানে৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়৷ জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। এছাড়া সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন রিটটি করেন৷ হাইকোর্ট রুল দেয়ার পর এখন শুনানি চলছে।
সংবিধানে এখনো রাষ্ট্রধর্ম আছে। আর প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, ‘‘নতুন করে আবার সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ফিরিয়ে আনার দরকার নেই। এমনিতেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা উচিত। রাষ্ট্রের তো কোনো ধর্ম হয় না। মুসলমান নামাজ পড়তে পারে। হিন্দু পূজা করতে পারে। রাষ্ট্র কি নামাজ পড়তে পারে? রাষ্ট্র কি পূজা করতে পারে? নাগরিক হিসাবে যদি সবার সমান অধিকার হয় তাহলে ধর্মের ব্যাপারে সমান হবে না কেন? আসলে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্র চলবে সেক্যুলারভাবে। আর যদি কোনো দেশের শতভাগ মানুষ মুসলিম হয় তাহলে আলাদা কথা।”
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘আমাদের ইসলাম ধর্ম যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব সেখানেও সেক্যুলার প্রাকটিস আছে। মহানবি (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন যে মদিনা সনদ হয় তাতে কিন্তু প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। মহানবির যে র্যাশনালিটি সেটা যদি মুসলমানরা বুঝতে পারে তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষতাই সর্বোত্তম,” বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তো অনেকবার বলেছে এটা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। এটা তারা পরিবর্তনের দাবি করছে। সব নাগরিককে সমান বলে আমরা যদি কোনো একটি ধর্ম, গোত্র বা গোষ্ঠীকে সুপিরিয়র করি তাহলে অন্যরা ইনফিরিয়র হয়ে যায় না?”
এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এখন যা সংবিধানে আছে, রাষ্ট্র ধর্ম আছে আবার ধর্মনিরপেক্ষতাও আছে। এটাকে আমরা বলি সোনার পাথর বাটি। একটা জগাখিচুরি অবস্থা। এখন যদি আবার ওইটা করে তাহলে তো কোনো সমাধান হলো না।”
তার কথা, ‘‘যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেখেন তাহলে ইকুইটি, ইকুয়ালিটি, স্যোসাল জাস্টিস এবং হিউম্যান ডিগনিটি৷ এখন যদি একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে তো অন্য ধর্মের যারা তারা কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পরিণত হয়। তাহলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর থাকে না।”
আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটের সাথে যায় না। সংবিধান আর ধর্ম দুইটি আলাদা জিনিস। কেউতো আর সংবিধান দিয়ে মুসলমান বা হিন্দু হয় না। আমরা ধর্ম জানি কোরান, বেদ বা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ দিয়ে। এর সঙ্গে সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই।”
‘‘তবে অবশ্যই দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে সংবিধানে কী থাকবে, কী থাকবে না। তবে আমার কথা হলো রাষ্ট্র এবং ধর্ম দুইটি আলাদা এবং আলাদা রাখাই শ্রেয়।”
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘‘পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোটাই অবৈধ৷ এটা একটা পার্লামেন্টারি ফ্রড। তাই এটা বাতিল হওয়া দরকার। এটা বাতিল হলে সংবিধানে যা ফিরে আসবে তাই হবে।”
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেল যা বলেছেন তা তার সাবমিশন। এটা রাষ্ট্রের বক্তব্য। আমাদের নিজস্ব দলীয় অবস্থান আছে।”
‘‘আমরা এমন কোনো সংশোধনী চাই না যাতে কোনো ধর্মের মানুষ তাদের বৈষম্যের শিকার মনে করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান। কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষও বাংলাদেশের নাগরিক। তাদেরও সমান অধিকার৷ তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। ধর্মীয় ব্যাপারে এখন সংবিধানে যা আছে আমরা সেই অবস্থানেই আছি। সব ধর্মের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তার পক্ষে আমরা।”
‘জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ধানের শীষ বিজয়ী হবে’
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.