জুমবাংলা ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন আইন বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডেইলি সানের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা তুজ জিনিয়ার বহিষ্কারকে ‘শাসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন । তিনি বলছেন, ‘সংসার চালাতে শাসন করবো, আবার আদর করবো- এটাইতো স্বাভাবিক।’
জিনিয়াকে বহিষ্কারের কারণ জানাতে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নুর উদ্দিন, প্রক্টর মো. আশিকুজ্জামান ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা তুজ জিনিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেন।
নিউজ পোর্টটালগুলো কোনো প্রকার সত্যতা যাচাই না করে এবং প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো তথ্য না নিয়েই এসব সংবাদ পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’
ভিসি বলেন, ‘ফাতেমা তুজ জিনিয়া অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশালীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফেসবুক, ইমেইল আইডি হ্যাক করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করে এবং ভর্তি পরীক্ষা বানচালের অপচেষ্টাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয় এমন নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন জিনিয়া। তিনি এরইমধ্যে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি দুইবার হ্যাক করেছেন।’
এছাড়াও ফাতেমা তুজ জিনিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে মিথ্যাচার ও অশালীন মন্তব্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘সন্তান তার বাবার সঙ্গে বেয়াদবির ভাষায় কথা বলবে এবং সেই সন্তানের ভাষা পরিবর্তন করতে বাবা সন্তানকে শাসন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সন্তান যদি কারো প্ররোচনায় বাবার কথা রেকর্ড করে সেটিকে অশালীন ভাষা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করে এটা তার ব্যাপার।’
এর আগেও একাধিক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যোগাদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছি, এমন কোনো রেকর্ড নেই। তবে নানান অপরাধের কারণে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। এখন সংসার চালাতে শাসন করবো আবার আদর করবো এটাইতো স্বাভাবিক।’
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া উপাচার্যের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফাতেমা তুজ জিনিয়া বলেন, ‘উপাচার্য স্যার প্রথমে বলেছিলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এখন আবার অসংখ্য অভিযোগ নিয়ে আসছেন। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।’ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করি যার ফলে উপাচার্য আমাকে বহিষ্কার করেন বলে দাবি তার।
মোবাইলে ফাতেমা তুজ জিনিয়ার সঙ্গে উপাচার্যের কথোপকথনটি ছিল এরকম:
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী তুমি জানো না?
জিনিয়া: এইটা নিয়ে একটা প্রতিবেদন লিখতে বলেছিল (অফিস থেকে) মতামতের ভিত্তিতে।
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ওখানে উল্টাপাল্টা সব লিখছো ব্যাপারটা কী?
জিনিয়া: স্যার আমি কিছু লিখিনি।
উপাচার্য: আরে লেখছো না (রেগে গিয়ে)? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি ফেসবুকে লেখার দরকার আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি জানো না? ফাজিল কোথাকার?
জিনিয়া: স্যার ওইটা ওই যে…
উপাচার্য: আবার বেয়াদবি…
জিনিয়া: সরি স্যার।
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। আইছো তো ভদ্রই। বেয়াদব কোথাকার। ফেসবুকে দেয়ার দরকার কী তোমার যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?
জিনিয়া: বুঝতে পারিনি স্যার।
উপাচার্য: তারপর কে কী লিখছে? তুমি লিখছো? পার্টিসিপেট করছো না ফালতু আলাপে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটাতো (ল ডিপার্টমেন্ট) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাচ্ছুর (বাছুর) তুই আবার (জানতে চাস) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? এ বিষয়ে ফাতেমা তুজ জিনিয়া সবার মতামত জানতে চেয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার এই পোস্টের কারণে উপাচার্যের রোষানলে পড়েন জিনিয়া। এরই প্রেক্ষিতে জিনিয়াকে সাময়িক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।