জুমবাংলা ডেস্ক : হযরত নূহ (আ.) ছিলেন একজন নবী, যাকে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছিলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মকে সেমেটিক ধর্ম বলা হয়। এসব ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে নূহ (আ.) এমন একটি নৌকা বানিয়েছিলেন, মহাপ্লাবনের সময় যেটিতে আশ্রয় নিয়ে মানুষ ও পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিকূল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল।
সম্প্রতি একদল গবেষক দাবি করেছেন তারা অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগের একটি পুরোনো নৌকার ‘ধ্বংসাবশেষ’ খুঁজে পেয়েছেন। এ নৌকাটিকেই নূহ (আ.)-এর নৌকার ধ্বংসাবশেষ বলেই ধারণা করছেন গবেষকরা।
খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল এবং মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনে নূহ (আ.)-এর নৌকা বানানোর প্রেক্ষাপট ও মহাপ্লাবনের প্রায় একই ধরনের দুটি বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রিস্টান পণ্ডিতদের মতে, নূহ (আ.) ছিলেন আদমের বংশের দশম উত্তরাধিকারী।
মহাপ্লাবনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাইবেলের আদি পুস্তক ‘দ্য বুক অব জেনেসিসে’ বলা হয়েছে, আদমের মৃত্যুর অনেক বছর পর পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে হানাহানি ও অন্যান্য খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল। তাদেরকে সঠিক পথে ফেরানোর জন্য সৃষ্টিকর্তা নূহ (আ.)-কে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার অধিকাংশ মানুষই নূহ (আ.)-এর দেখানো পথে হাঁটেনি। এমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তা সিদ্ধান্ত নিলেন, এক মহাপ্লাবন সৃষ্টি করে তিনি বিপথগামীদের ধ্বংস করে দিবেন।
এরপর নূহ (আ.)-কে বড় আকৃতির একটি নৌকা বানাতে বলা হয়। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, লম্বায় নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় পাঁচশ ফুট। গফার বা সাইপ্রাস গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকাটির তিনটি আলাদা তলা এবং একটি দরজা ছিল।
বানানোর পর নৌকাটির ভেতরে ও বাইরে পিচ লাগানো হয় যেন পানিতে কাঠ নষ্ট হয়ে না যায়। এরপর পশু ও পাখির মধ্য থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রতিটির সাতটি করে জোড়া নৌকাটিতে তোলা হয়।
জোড়ায় জোড়ায় পশু-পাখি তোলার পর নূহ (আ.) তার পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে নৌকায় ওঠেন। এরপর সৃষ্টিকর্তা নৌকার দরজা বন্ধ করে দেন। দ্য বুক অব জেনেসিসের বর্ণনা অনুযায়ী, তিন তলা নৌকার নিচতলায় জন্তু-জানোয়ার, দোতলায় মানুষ এবং ওপরের তলায় পাখিদের রাখা হয়।
এরপর শুরু হয় মহাপ্লাবন। প্রায় ৪০ দিন এবং ৪০ রাত ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়া না ডোবা পর্যন্ত পানি বাড়তে থাকে বলে বাইবেলের বর্ণনায় উঠে এসেছে।
এই মহাপ্লাবন ১৫০ দিন স্থায়ী হয়েছিল। ফলে নূহ (আ.)-এর নৌকার বাইরে পৃথিবীর আর কোথাও কোনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না বলে বাইবেলে বলা হয়েছে। পাঁচ মাস পর পানি কমতে শুরু করে। এরপর নূহ (আ.)-এর নৌকা আরারাত পাহাড়ে অবস্থান নেয়।
মুসলমানদের ধর্মীয়গ্রন্থ আল কোরআনেও ঘটনাটিকে প্রায় একইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বাইবেলের বর্ণনায় যেখানে প্রতিটি পশু-পাখির সাতটি করে জোড়া নৌকায় তোলার কথা বলা হয়েছে, সেখানে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে একটি করে জোড়ার কথা।
এছাড়া দেড়শ দিন ভেসে বেড়ানোর পর নূহ (আ.)-এর নৌকাটি জুদি নামের একটি পর্বতে নোঙর ফেলে বলে কোরআনের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামি পণ্ডিতদের অনেকেই মনে করেন, জুদি পর্বতটি তুরস্কের আরারাত পর্বতমালারই একটি অংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।