জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বিচারের আশায় দিন কাটছে ধষর্ণের শিকার এক নারী (২১)। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে স্বামীর সাথে সংসারও করতে পারছেন না তিনি। সম্প্রতি তার স্বামী তালাকও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই নারী জানিয়েছেন, ধর্ষণের পর থেকে স্বামী তার সাথে যোগাযোগ করেননি। বরং তাকে তালাকের নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু সংসার করতে চান নির্যাতনের শিকার এই নারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ওষুধ কেনার জন্য বাজারে যাওয়ার পথে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যান এক যুবক। এ কাজে আরও দুই জন যুবক সহযোগিতা করেন। পরে আটকে ধর্ষণ করে পরের দিন অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগী নারীকে সড়কের ওপর ফেলে দিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে এ ঘটনায় চলতি মাসের ১০ তারিখে গাবতলী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ভুক্তভোগী। এতে তিন জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন, গাবতলী উপজেলার কলাকোপা গ্রামের মো. মোহন (২৫), মো. রুবেল (২০) ও মো. সাগর (২১)। থানায় মামলা নেয়ার পর গত ১২ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিকেল পরীক্ষাও করানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মোহন ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এমনকি প্রকাশ্যে তাকে স্বামীকে তালাক দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন মোহন। কিন্তু তার এসব কথায় ওই নারী রাজি হতেন না। এতে মোহন ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি বিরক্ত করতেন। এরই জেরে ৬ সেপ্টেম্বরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওষুধ কেনার জন্য বাজারের দিকে যান ভুক্তভোগী। সেখানে যাওয়ার পথে মোহন তাকে মুখ চেপে ধরে গাড়িতে তোলেন। এ কাজে তাকে রুবেল ও সাগর সহযোগিতা করেন। পরে সেখান থেকে মোহনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন মোহন। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই নারীকে তার বাড়ির এলাকার রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়।
পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পরে অভিযুক্তরা একাধিকবার বিষয়টি আপোষ করার কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে বিচার না পেয়ে পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর ওই নারী নিজে বাদী হয়ে গাবতলী থানায় মামলা করেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে তার বিয়ে হয়। স্বামী পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। বাড়ি একই এলাকায়। তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। ধর্ষণের ঘটনার কয়েকদিন পর তার স্বামী বাসায় এসেছিলেন। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে চলে যান। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেননি। তাকেও বাড়িতে নিয়েও যায়নি। ভুক্তভোগীর মা জানান, অভিযুক্তরা লোক মারফত খবর দিয়ে মামলা তুলে নিতে বলে। আরও বলে মামলা চালানোর খরচ বেশি। তোমরা কিছুই করতে পারবা না।
ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, আমার স্বামী ভাত খাওয়াবে না। আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি তালাকের কাগজে সই দেইনি। কিন্তু আমি স্বামীর সাথে সংসার করে খেতে চাই। আমার একটা মেয়েও আছে। ওই আসামীরা আমার স্বামীকে টাকা পয়সা দিয়ে তালাক দিতে বাধ্য করেছে বলে উল্লেখ করেন নির্যাতিতা এই নারী। তিনি বলেন, আমাকে নির্যাতনের পর থেকেই তারা টাকার গরম দেখিয়ে হুমকি দিতেন। আমরা খুব গরীব। এ জন্য বিচার চাইতে সাহস পাইনি। আমাকে স্বামীর ঘর থেকেও বিতাড়িত করেছে। এখন আদালতে ওদের বিচার হোক এটাই আশা।
এ বিষয়ে তার স্বামী তানজিল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তালাকের বিষয় স্বীকার করেন তিনি। তানজিল বলেন, প্রায় ১৬ থেকে ১৭ দিন আগে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি। আমার বাড়ির সবাই ওর সাথে সংসার করতে নিষেধ করেছে। তাই তালাক দিয়েছি। ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছেন গাবতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক। মামলার ঘটনা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিষয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে। কিন্তু পলাতক থাকায় গ্রেফতার সম্ভব হচ্ছে না। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।