আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এগিয়ে আসছে রাজধানী দামেস্কের দিকে; পরিস্থিতি নাজুক দেখে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে পালান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, আশ্রয় নেন রাশিয়ায়। ব্রিটিশ স্ত্রী আর তিন ছেলে-মেয়েকে আগেই সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
রবিবার বাশার দেশ ছেড়ে পালানোর পরপরই তার প্রাসাদে হামলে পড়ে হাজার হাজার সিরীয়, দুর্ভেদ্য ভবনটির রহস্যভেদে উন্মুখ হয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে তারা। ভেতরে ঢুকে দামি মার্বেল পাথরের মেঝের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় চারপাশের বিলাসী আয়োজন দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে তারা।
কী নেই সেখানে? দেয়ালের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিশালাকৃতির মূল্যবান আয়না। সুদৃশ্য কারুকার্যে শোভিত কাঠের ছাদ। তাতে ঝুলছে চোখ ধাঁধানো ঝাড়বাতি। দামি পেইন্টিং আর শিল্পকর্মে সাজানো গোটা প্রাসাদ।
আরেকটু ভেতরে ঢুকে একটি কক্ষের এককোণায় ফরাসি ব্র্যান্ড লুই ভিতোঁর একটি স্যুটকেস পড়ে থাকতে দেখা যায়, যার দাম ৩৬ হাজার ৫০০ পাউন্ডের কম নয়। রেফ্রিজারেটর ভর্তি মাংস। সেগুলো আবার যে কাগজে মোড়া, সেই মোড়ক আবার বানিয়েছে নামকরা ফরাসি ব্র্যান্ড হেমেস।
আসাদের প্রশস্ত গ্যারেজে গিয়ে তো অনেকের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়, যারা এমন বিত্ত-বৈভব কস্মিনকালেও দেখেনি। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের অন্দরমহল।
সেখানে কয়েক ডজন গাড়ির মধ্যে আছে অ্যাস্টন মার্টিন, ল্যাম্বরগিনির মতো অতি দামি ব্র্যান্ডের সব গাড়ি। আছে লাল রঙা একটি ফেরারিও। এর পাশেই রাখা সদ্য কেনা কালো রঙের লেক্সাস, যার দাম দেড় মিলিয়ন পাউন্ড তো হবেই।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে আসাদ ও তার পরিবার একদিকে যখন নিজ দেশে এই আয়েশী জীবনযাপনের মধ্যে ছিলেন, ঠিক তখন গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার অধিকাংশ মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাত।
২০২২ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাতে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, সিরিয়ার প্রায় দেড় কোটি মানুষ (মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ) দরিদ্র। আর প্রতি চারজনের মধ্যে একজন অতি দরিদ্র।
সে বছরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর হিসাব করে বলেছিল, আসাদের পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন পাউন্ড।
অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে আবাসন খাত, শেল কোম্পানি ও বিদেশের কর স্বর্গে এসব অর্থ লুকিয়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার আর্থিক খাতের বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখে তাদের কোম্পানির মাধ্যমে দেশ থেকে আসাদ ও তার পরিবার এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখও করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
সিরিয়ায়প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ভেতরটা এখন ঘুরেফিরে দেখতে পারছে সিরিয়ার জনগণ।
আসাদের দুই যুগের শাসনামলে তার ব্রিটিশ স্ত্রী আসমা আল-আসাদ কেবল ঘর সাজানো আর কাপড়চোপড় কেনার পেছনেই খরচ করতেন হাজার হাজার ডলার- এই তথ্য উইকিলিকসের।
তারা ২০১২ সালে বলেছিল, প্রেসিডেন্টের বাসভবনের জন্য আসবাবপত্র কিনতে সাড়ে তিন লাখ ডলার ব্যয় করেন আসমা আল-আসাদ। আর তার স্ফটিক পাথরে খচিত কয়েক জোড়া জুতার দাম কমসে কম সাত হাজার ডলার।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেওয়ার পর কি এই বিলাসবহুল জীবন আর কাটতে পারবেন ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া আসাদ ও তার পরিবার?
এর জবাব ওপরেই দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের আর সব দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকের মতো আসাদও লুটপাট থেকে অর্জিত সম্পদ দেশে রাখেননি, সব বাইরে পাচার করে দিয়েছেন।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মস্কোতে কমপক্ষে ২০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন আসাদ ও তার পরিবার, যার মূল্য ৩ কোটি পাউন্ডের বেশি।
এছাড়া সিরিয়ার দ্বিতীয় সম্পদশালী পরিবার হিসেবে বিবেচিত আসাদের চাচা মোহাম্মদ মাখলফের রাশিয়ায় বিপুল সম্পদ রয়েছে। মস্কোর সিটি অব ক্যাপিটালস কমপ্লেক্সে আসাদ পরিবারের একটি অ্যাপার্টমেন্টের চিত্র।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, মস্কোর অভিজাত এলাকা সিটি অব ক্যাপিটালস কমপ্লেক্সে অন্তত ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট আছে মাখলফ পরিবারের।
ওই এলাকায়ই এখন বাশার আল-আসাদ, তার স্ত্রী আসমা আল-আসাদ, তাদের ছেলে ২৪ বছর বয়সী হাফেজ আল-আসাদ, ২১ বছর বয়সী করিম আল-আসাদ ও ২২ বছর বয়সী মেয়ে জেইন আল-আসাদের আবাসস্থল হতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
মস্কোর সঙ্গে আসাদের পরিবারের সম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে, বড় ছেলে হাফেজ আল-আসাদকে বিশ্বের অন্য কোনও দেশে না পড়িয়ে রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ান সিরিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
হাফেজ এখন মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শারীরিক ও গাণিতিক বিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।
ফলে ২৪ বছর দেশ শাসন করে সিরিয়া ছাড়তে বাধ্য হলেও বাশার পরিবারের বিলাসি জীবনযাপনে তেমন পরিবর্তনের ইঙ্গিত আপাতত মিলছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।