Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home নতুন ঔষধ গবেষণা তথ্য: সুস্থ জীবনের চাবিকাখি
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    নতুন ঔষধ গবেষণা তথ্য: সুস্থ জীবনের চাবিকাখি

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasJuly 14, 202516 Mins Read
    Advertisement

    বৃষ্টিধোয়া এক সকাল। ঢাকার ব্যস্ততম হাসপাতালের করিডরে অপেক্ষারত মানুষের চোখে ক্লান্তি, আর গভীর এক প্রত্যাশা। কর্নারের বেঞ্চে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আর হৃদরোগ তাকে প্রায় ঘরবন্দী করে রেখেছিল। সিঁড়ি ভাঙা, বাজার করা – সাধারণ কাজগুলোও যেন পাহাড়সম হয়ে উঠেছিল। আজ তার চোখে একটু আলো। ডাক্তার বলেছেন, গবেষণাগারে পরীক্ষাধীন এক নতুন ধরনের ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার সুযোগ হতে পারে তার। এই ‘সুযোগ’ শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য রহিমা বেগমের স্বপ্ন – স্বাভাবিক, কর্মক্ষম, সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি ধরে রাখার প্রত্যাশা। আর এই প্রত্যাশাই আজ বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি অগ্রগতি মানবজীবনের গল্প বদলে দিচ্ছে।

    নতুন ঔষধ গবেষণা তথ্য

    গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি রীতিমত দ্রুতগামী। প্রতিদিনই ল্যাবরেটরিতে ঘটে যাচ্ছে যুগান্তকারী আবিষ্কার। জিন থেরাপি, পার্সোনালাইজড মেডিসিন, ইমিউনোথেরাপি, স্টেম সেল থেরাপি – এই শব্দগুলো এখন আর কল্পবিজ্ঞানের পাতায় সীমাবদ্ধ নেই। এগুলো বাস্তবে রূপ নিচ্ছে, ক্রমাগত পরিমার্জিত হচ্ছে, আর আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন-নতুন সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। শুধু জীবন নয়, জীবনযাপনের গুণগত মান ফিরিয়ে আনার এই প্রয়াসেই নিহিত আছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রকৃত সাফল্য। এই নিবন্ধে আমরা ডুব দেব সেই অভিযাত্রায় – দেখব কীভাবে নতুন ঔষধ গবেষণা আমাদের সামনে উন্মোচন করছে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর অফুরন্ত সম্ভাবনার দরজা।

    সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি: গবেষণার নতুন দিগন্তে জিন থেরাপি ও পার্সোনালাইজড মেডিসিনের অভিযাত্রা

    অনেকদিন ধরেই আমরা জানি, আমাদের শরীরের গঠন, কার্যপ্রণালী, এমনকি অসুখ-বিসুখের প্রবণতা অনেকটাই নির্ধারিত হয় জিনগত বৈশিষ্ট্য দ্বারা। কিন্তু এই জিনকে সরাসরি ‘টার্গেট’ করে চিকিৎসা দেওয়ার ধারণাটি ছিল প্রায় অবাস্তব। আজ সেই অবাস্তব ধারণাই বাস্তব রূপ পেয়েছে জিন থেরাপি (Gene Therapy) নামক বিপ্লবের মাধ্যমে। চিন্তা করুন এমন এক শিশুর কথা, যার জন্ম থেকেই বিরল কোনও জিনগত রোগ (যেমন স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি – SMA) আছে, যা তাকে ধীরে ধীরে অচল করে দিচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা হয়তো শুধু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু জিন থেরাপি সরাসরি ত্রুটিপূর্ণ জিনটিকে ঠিক করার বা তার জায়গায় সুস্থ জিন বসানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশেও, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) গবেষক দল সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সাফল্য পেয়েছে। রোগীকে দেওয়া হয় বিশেষভাবে ডিজাইন করা ভাইরাল ভেক্টর, যা শরীরের নির্দিষ্ট কোষে পৌঁছে সুস্থ জিনের কপি স্থানান্তর করে। ফলাফল? যে শিশুটি হয়তো কখনোই হাঁটতে পারবে না বলে ভাবা হচ্ছিল, সে ধীরে ধীরে পেশীর শক্তি ফিরে পাচ্ছে, বসতে পারছে, এমনকি হাঁটার চেষ্টাও শুরু করছে। এটিই তো প্রকৃত সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি অর্জন।

    জিন থেরাপির পাশাপাশি আরেকটি বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে পার্সোনালাইজড মেডিসিন বা ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার জগতে। এই ধারণাটি অত্যন্ত সহজ, কিন্তু এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা সবাই আলাদা। আমাদের জিনগত গঠন, জীবনযাপন, পরিবেশ – সব কিছু মিলেই তৈরি হয় আমাদের স্বতন্ত্রতা। তাহলে একই রোগে আক্রান্ত সকল রোগীকে কেন একই ওষুধ দেওয়া হবে? পার্সোনালাইজড মেডিসিন এই প্রশ্নটিকেই কেন্দ্রে রেখে কাজ করে। এখানে মূল পদক্ষেপগুলো হলো:

    1. জিনোম সিকোয়েন্সিং: রোগীর সম্পূর্ণ জিনোম বা নির্দিষ্ট জিনের সিকোয়েন্সিং করে দেখা হয় কোন জিনগত ভ্যারিয়েন্ট (বৈচিত্র্য) তার অসুখের জন্য দায়ী বা কোন ওষুধ তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ হবে।
    2. বায়োমার্কার শনাক্তকরণ: টিউমারের ক্ষেত্রে, টিউমার টিস্যুর বায়োপসি করে সুনির্দিষ্ট মিউটেশন বা বায়োমার্কার শনাক্ত করা হয়। যেমন, ব্রেস্ট ক্যান্সারে HER2 পজিটিভ বা নেগেটিভ হওয়া চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়।
    3. টার্গেটেড থেরাপি: শনাক্তকৃত বায়োমার্কার বা মিউটেশনের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয় সেই নির্দিষ্ট টার্গেটে আক্রমণ করে এমন ওষুধ (টার্গেটেড থেরাপি)। এগুলো ঐতিহ্যবাহী কেমোথেরাপির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তুলনামূলক কম।
    4. ওষুধের মেটাবলিজম: রোগীর জিনগত বৈশিষ্ট্য দেখে বোঝা যায় তার শরীর কোন ওষুধ কত দ্রুত বা ধীরে মেটাবলাইজ করবে, ফলে সঠিক ডোজ নির্ধারণ সম্ভব হয়, যা কার্যকারিতা বাড়ায় এবং বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমায়।

    বাংলাদেশে এই দিকটি ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিআরএইচ) এখন কিছু ক্যান্সারের (যেমন স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার) চিকিৎসার আগে বায়োমার্কার টেস্টিং করা হচ্ছে রোগীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর থেরাপি বেছে নেওয়ার জন্য। এই ব্যক্তিকৃত পদ্ধতিই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জন্য উপযুক্ত সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে, যা তাকে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা এবং ভালো জীবনযাপনের সুযোগ দেয়। এটি শুধু চিকিৎসার কার্যকারিতা বাড়ায় না, অকার্যকর চিকিৎসায় রোগীর সময়, অর্থ ও শারীরিক কষ্টের অপচয়ও রোধ করে।

    রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা: ইমিউনোথেরাপির যুগ এবং সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র

    মানুষের শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষাকবচ হলো তার নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু ক্যান্সার কোষের মতো ধূর্ত শত্রুরা এই ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সিদ্ধহস্ত। ক্যান্সার কোষগুলো নিজেদেরকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে অথবা ইমিউন সেলগুলোর (যেমন টি-সেল) উপর ‘ব্রেক’ চেপে ধরে যাতে তারা আক্রমণ না করে। ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy) হলো সেই যুগান্তকারী পদ্ধতি, যা রোগীর নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমকে পুনরায় সক্রিয় করে, প্রশিক্ষণ দেয় এবং শক্তিশালী করে তোলে যাতে তা ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, বিশেষ করে এমন ক্যান্সারে যেগুলো আগে চিকিৎসায় সাড়া দিত না।

    ইমিউনোথেরাপির প্রধান ধরনগুলো:

    • চেকপয়েন্ট ইনহিবিটরস: এই ওষুধগুলো ইমিউন সেলের উপর বসে থাকা সেই ‘ব্রেক’ সরিয়ে দেয়, ফলে টি-সেলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে ক্যান্সার কোষে আক্রমণ করে। (যেমন: Pembrolizumab, Nivolumab)।
    • সিএআর-টি সেল থেরাপি: এটি এক ধরনের জিন থেরাপিও বটে। রোগীর নিজস্ব টি-সেল সংগ্রহ করে ল্যাবে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এদের জিনগত পরিবর্তন করে এমন রিসেপ্টর (CAR – Chimeric Antigen Receptor) তৈরি করা হয় যা ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিনকে চিনতে পারে। এই সুপার-চার্জড টি-সেলগুলোকে রোগীর শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তারা ক্যান্সার কোষ খুঁজে বের করে ধ্বংস করে। এটি বিশেষ করে রক্তের ক্যান্সার (লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা) চিকিৎসায় আশ্চর্যজনক সাফল্য দেখিয়েছে।
    • ক্যান্সার ভ্যাকসিন: টিউমারের নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনকে টার্গেট করে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়, যা ইমিউন সিস্টেমকে সেই অ্যান্টিজেন চিনতে ও আক্রমণ করতে শেখায়। যদিও প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিনের (যেমন HPV ভ্যাকসিন) মতো ব্যাপক সাফল্য এখনও প্রায়োগিক স্তরে আসেনি, থেরাপিউটিক ভ্যাকসিনের গবেষণা অত্যন্ত সক্রিয়।

    বাংলাদেশে ইমিউনোথেরাপি: ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল, অ্যাপোলো হাসপাতাল এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের মতো উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে এখন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটরস ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের (যেমন মেলানোমা, ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যদিও সিএআর-টি সেল থেরাপির মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসা এখনও দেশে ব্যাপকভাবে প্রাপ্য নয় এবং ব্যয়বহুল, তবে গবেষণা ও অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। এই থেরাপি অনেক দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগীর জন্য নতুন করে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি এনে দিয়েছে।

    সংক্রামক ব্যাধির মোকাবিলায়ও নতুন ঔষধ গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বা অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধের এই ক্রান্তিকালে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবী ক্রমাগত নিজেদের রূপ বদলাচ্ছে এবং বিদ্যমান ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) AMR-কে বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য দশটি প্রধান হুমকির একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণার অগ্রভাগে আছে:

    • নতুন শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক: বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এমন নতুন শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান। এগুলো প্রায়ই প্রকৃতির অপ্রচলিত উৎস (যেমন মাটির অণুজীব, সামুদ্রিক প্রাণী) থেকে আবিষ্কৃত হয়।
    • ফাজ থেরাপি: ব্যাকটেরিয়াভক্ষণ ভাইরাস (ব্যাকটেরিওফাজ) ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ ও ধ্বংস করা। এটি অত্যন্ত টার্গেটেড পদ্ধতি, যেখানে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতি হয় না। ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) সহ বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে ফাজ থেরাপির উপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চলছে। আইসিডিডিআর,বি-র ওয়েবসাইটে সংক্রামক রোগ গবেষণা সম্পর্কে আরও জানুন
    • অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগস: কোভিড-১৯ মহামারি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের গুরুত্ব ও উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করেছে। ক্রমাগত নতুন ও কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল আবিষ্কৃত হচ্ছে এইচআইভি, হেপাটাইটিস সি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
    • ভ্যাকসিন টেকনোলজির উন্নয়ন: এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সাফল্য (যেমন কোভিড ভ্যাকসিন) ভ্যাকসিনোলজির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধেও দ্রুত ও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করা এখন অনেক সহজ। ডেঙ্গু, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিনের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে।

    এই গবেষণাগুলো শুধু জীবন বাঁচায় না, মহামারি প্রতিরোধ করে, স্বাস্থ্যব্যয় কমায় এবং সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় – যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য টেকসই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।

    দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্নায়বিক রোগের নতুন দিগন্ত

    ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস, স্নায়বিক রোগ (যেমন পার্কিনসন্স, আলঝেইমার) – এগুলো বিশ্বব্যাপী অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রধান কারণ। এসব দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা প্রায়শই সারাজীবন ওষুধ সেবন এবং জীবনযাত্রায় কঠোর পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। নতুন ঔষধ গবেষণা এই রোগগুলির ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে চাইছে, রোগীদের জন্য আরও সহজ, কার্যকর এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথ সুগম করছে।

    ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে অভিনব উদ্ভাবন:

    • SGLT2 ইনহিবিটরস: এই গ্রুপের ওষুধ (যেমন Empagliflozin, Dapagliflozin) কিডনিতে গ্লুকোজের পুনঃশোষণ কমিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত শর্করা বের করে দেয়। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হৃদরোগ ও কিডনি রোগের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় – ডায়াবেটিস রোগীর সার্বিক সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি রক্ষায় একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি।
    • GLP-1 রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্টস: এই ইঞ্জেক্টেবল ওষুধগুলো (যেমন Semaglutide, Liraglutide) ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায়, ক্ষুধা কমায় এবং পাকস্থলী খালি হতে দেরি করে। এগুলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন কমাতেও অত্যন্ত কার্যকর, যা টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও এদের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
    • ‘স্মার্ট ইনসুলিন’ ও ক্লোজড-লুপ সিস্টেম: গবেষণা চলছে এমন ইনসুলিন তৈরির জন্য যা রক্তে শর্করার মাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় হয়। এছাড়া কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় বা ক্লোজড-লুপ সিস্টেম (যেমন ইনসুলিন পাম্প + গ্লুকোজ মনিটরিং সেন্সরের সমন্বয়) ক্রমশ উন্নত ও সহজলভ্য হচ্ছে, যা ডায়াবেটিস রোগীর দৈনন্দিন চাপ কমিয়ে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি ধরে রাখতে সাহায্য করছে। বাংলাদেশে এখন অনেক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রোগীদের জন্য এই নতুন ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করছেন এবং ক্লোজড-লুপ সিস্টেম ব্যবহার শুরু হয়েছে।

    হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো ও চিকিৎসায় অগ্রগতি:

    • PCSK9 ইনহিবিটরস: এই ইঞ্জেক্টেবল ওষুধগুলো (যেমন Evolocumab, Alirocumab) রক্তে ‘খারাপ’ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমাতে পারে, বিশেষ করে যাদের স্ট্যাটিন ওষুধে যথেষ্ট ফল হয় না বা সহ্য হয় না। এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকর।
    • নতুন জমাটবিরোধী (Anticoagulants): ওয়ারফারিনের বিকল্প হিসেবে আবিষ্কৃত নতুন জেনারেশনের ওষুধ (যেমন Dabigatran, Rivaroxaban, Apixaban) কার্যকরতার পাশাপাশি নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন কমায় এবং খাদ্যাভ্যাসে কম বিধিনিষেধের সুযোগ দেয়, রোগীর জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলে।
    • হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিপূরণ ও মেরামতের থেরাপি: স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের পর হার্টের পেশীর ক্ষতি পূরণের গবেষণা আশা জাগাচ্ছে। জিন থেরাপি দিয়ে নতুন রক্তনালী গজানোর (Angiogenesis) প্রচেষ্টাও চলছে।

    স্নায়বিক রোগের রহস্য ভেদ ও চিকিৎসার নতুন পথ:
    আলঝেইমার, পার্কিনসন্স, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) এর মতো স্নায়বিক রোগগুলো জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী। নতুন গবেষণা এই রোগগুলোর মলিকুলার মেকানিজম বুঝতে এবং টার্গেটেড থেরাপি আবিষ্কারে মনোনিবেশ করছে।

    • আলঝেইমার্স: বিটা-অ্যামাইলয়েড প্ল্যাক এবং টাউ প্রোটিন ট্যাঙ্গলকে টার্গেট করে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি (যেমন Aducanumab, Lecanemab – যদিও বিতর্কিত) রোগের অগ্রগতি ধীর করতে পারে বলে প্রমাণ মিলছে। এছাড়াও প্রদাহ কমানো এবং সিন্যাপটিক কার্যকারিতা রক্ষার ওষুধের গবেষণা চলছে।
    • পার্কিনসন্স: জিন থেরাপি এবং স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে ডোপামিন উৎপাদনকারী নিউরন প্রতিস্থাপন বা মেরামতের প্রচেষ্টা। এছাড়া, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের জন্য বায়োমার্কার খুঁজে বের করার গবেষণাও গুরুত্বপূর্ণ।
    • এমএস: নতুন ইমিউনোমডুলেটরি ওষুধ এবং স্টেম সেল থেরাপি রোগের পুনরাবৃত্তি কমাতে এবং অক্ষমতার অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করছে।

    এই গবেষণাগুলো শুধু জীবনকাল বাড়ায় না, রোগীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, চিন্তা করা এবং সামাজিকভাবে যুক্ত থাকার সামর্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে – অর্থাৎ তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয় সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্বে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি খোঁজা

    বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতির আলো বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছে, কিন্তু তা এখনও অনেকাংশে সীমিত এবং চ্যালেঞ্জে ঘেরা। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই যুগান্তকারী থেরাপি ও ওষুধগুলো পৌঁছে দেওয়া এবং সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি সকলের জন্য নিশ্চিত করা একটি জটিল সমীকরণ।

    উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো:

    1. অতিরিক্ত ব্যয়: জিন থেরাপি, সিএআর-টি থেরাপি, নতুন টার্গেটেড ক্যান্সার ওষুধ বা উচ্চ প্রযুক্তির ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট ডিভাইসের দাম অত্যন্ত বেশি। একটি একক ডোজ জিন থেরাপির দাম কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সাথে এই ব্যয় সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
    2. অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা: জিন থেরাপি, স্টেম সেল থেরাপি বা উন্নত পার্সোনালাইজড মেডিসিনের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাব, প্রশিক্ষিত কর্মী (জিনেটিক কাউন্সেলর, বিশেষজ্ঞ টেকনিশিয়ান) এবং জটিল উৎপাদন ও সংরক্ষণ শৃঙ্খলার প্রয়োজন। বাংলাদেশে এই অবকাঠামো এখনও ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠেনি।
    3. প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব: নতুন প্রযুক্তি ও থেরাপি ব্যবহার, ব্যাখ্যা এবং পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং গবেষকের প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি প্রকট।
    4. নীতিগত ও নৈতিক জটিলতা: জিন এডিটিং (যেমন CRISPR-Cas9), স্টেম সেল গবেষণা (বিশেষ করে ভ্রূণীয় স্টেম সেল) নিয়ে নৈতিক বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে এই ধরনের গবেষণা ও প্রয়োগের জন্য স্বচ্ছ, আধুনিক এবং নৈতিকতাভিত্তিক নীতিমালা ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক দ্রুত গড়ে তোলা প্রয়োজন।
    5. গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের অভাব: স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ এবং নতুন থেরাপির সুলভ সংস্করণ (Biosimilars, Generic versions) তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন।

    আলোর দিক: সম্ভাবনা ও পদক্ষেপ:

    1. সরকারি উদ্যোগ: বাংলাদেশ সরকার জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন করেছে এবং স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে উৎসাহিত করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ক্রমশ উন্নত প্রশিক্ষণের দিকে নজর দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে মলিকুলার বায়োলজি, জিনোমিক্স এবং বায়োটেকনোলজির উপর গবেষণা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি সম্পর্কে জানুন
    2. স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের ভূমিকা: বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিশ্বমানের। বেক্সিমকো, স্কয়ার, ইনসেপটা, রেনাটা, অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজের মতো কোম্পানিগুলো উচ্চমানের জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি ধীরে ধীরে বায়োসিমিলার (জৈবসদৃশ ওষুধ) উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছে, যা মূল ওষুধের চেয়ে সাশ্রয়ী। এটি নতুন ওষুধের অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়াতে পারে।
    3. ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সুযোগ: আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কেন্দ্র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকায় বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের রোগীরা বিশ্বমানের চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন, গবেষণায় অংশ নিতে পারছেন এবং দেশে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে।
    4. জনসচেতনতা ও শিক্ষা: নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করা এবং সঠিক তথ্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভ্রান্ত ধারণা দূর হয় এবং রোগীরা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
    5. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), গ্লোবাল ফান্ড, গ্যাভি অ্যালায়েন্সের মতো সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্থান বিনিময় করা যেতে পারে।

    সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি শুধু অত্যাধুনিক ওষুধ বা থেরাপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা – উন্নত গবেষণা, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধের প্রাপ্যতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশকে তার সীমিত সম্পদকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করে, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে এবং স্থানীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে এই সমন্বিত পথেই এগোতে হবে।

    ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো-মেডিসিন ও টেলিমেডিসিনের অভিযাত্রা

    চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যত আরও রোমাঞ্চকর। নতুন ঔষধ গবেষণা এখন কেবল ল্যাবরেটরির টেস্ট টিউবেই সীমাবদ্ধ নেই; এটি ডেটা সায়েন্স, ন্যানোটেকনোলজি এবং ডিজিটাল টেকনোলজির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। এই সমন্বয়ই আগামী দিনের সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি নির্মাণ করবে।

    • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং: AI ইতিমধ্যেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

      • নতুন ওষুধ আবিষ্কার: AI অ্যালগরিদম বিশাল ডাটাবেস (জিনোমিক ডাটা, প্রোটিন স্ট্রাকচার, বিদ্যমান ওষুধের ডাটা) বিশ্লেষণ করে কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে এমন অণু শনাক্ত করতে পারে যা নতুন ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে – ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির যা সময় লাগত তার চেয়ে বহুগুণ কম সময়ে।
      • রোগ শনাক্তকরণ: AI চিত্র বিশ্লেষণ করে (এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, মাইক্রোস্কোপিক ইমেজ) ক্যান্সার, চোখের রোগ বা স্নায়বিক রোগের সূক্ষ্ম লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে, অনেক সময় মানুষের চেয়েও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে।
      • পার্সোনালাইজড ট্রিটমেন্ট প্ল্যান: রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রি, জিনোমিক ডাটা, লাইফস্টাইল ডাটা একত্রিত করে AI সম্ভাব্য চিকিৎসা ফলাফল ভবিষ্যদ্বাণী করতে এবং ব্যক্তিগতকৃত সর্বোত্তম চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রস্তাব করতে পারে।
      • ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডিজাইন: AI সাহায্য করতে পারে কোন রোগীরা কোন ট্রায়ালের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এবং ট্রায়ালের ফলাফল পূর্বাভাস দিতে।
    • ন্যানো-মেডিসিন: ন্যানোটেকনোলজি (এক ন্যানোমিটার = এক মিটারের একশো কোটি ভাগ) চিকিৎসায় ব্যবহার করে ওষুধকে শরীরের নির্দিষ্ট কোষ বা টিস্যুতে (যেমন টিউমার সাইট) পৌঁছে দেওয়া যায়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।

      • ন্যানো-ক্যারিয়ার: বিশেষভাবে ডিজাইন করা ন্যানো পার্টিকল ওষুধ বহন করে সরাসরি রোগাক্রান্ত কোষে পৌঁছে দিতে পারে, সুস্থ কোষের ক্ষতি কমায়।
      • ডায়াগনস্টিকস: ন্যানো পার্টিকল ব্যবহার করে অতি সংবেদনশীল ডায়াগনস্টিক টুল তৈরি করা যায়, যা রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই শনাক্ত করতে পারে।
      • থেরানোস্টিক্স (Theranostics): এটি থেরাপি এবং ডায়াগনস্টিক্সের সমন্বয়। ন্যানো পার্টিকল একইসাথে রোগ শনাক্ত করতে এবং ওষুধ সরবরাহ করতে পারে।
    • টেলিমেডিসিন ও ডিজিটাল হেলথ: কোভিড-১৯ মহামারি টেলিমেডিসিনের গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যবহারকে অভূতপূর্ব ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি আছে, সেখানে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে।
      • দূর থেকে পরামর্শ: রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ শহর থেকে দূরবর্তী এলাকা থেকেও নিতে পারেন।
      • রিমোট মনিটরিং: ওয়্যারেবল ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর ভাইটাল সাইন (রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, হৃৎস্পন্দন) দূর থেকে মনিটর করা যায়, যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
      • স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা: মোবাইল অ্যাপ, এসএমএস এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া যায় সহজে।
      • ই-ফার্মেসি: নির্ভরযোগ্য ওষুধ অনলাইনে অর্ডার ও সরবরাহের সুবিধা।

    বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা: সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের সাথে সঙ্গতি রেখে স্বাস্থ্য খাতেও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ (Swasthya Batayon) নামে জাতীয় টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও টেলিমেডিসিন ও ডিজিটাল হেলথ সলিউশন অফার করছে। তবে ডিজিটাল ডিভাইড, ইন্টারনেট সংযোগের গতি ও সহজলভ্যতা এবং ডেটা গোপনীয়তা নিশ্চিত করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

    এই প্রযুক্তিগুলোর সমন্বিত ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, প্রতিরোধমূলক এবং কার্যকর স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, প্রত্যেক মানুষের হাতে পৌঁছে দেবে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

    জেনে রাখুন (FAQs)

    1. জিন থেরাপি কি বাংলাদেশে পাওয়া যায়?
      জিন থেরাপি বিশ্বে এখনও অত্যন্ত নতুন এবং ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। বাংলাদেশে বর্তমানে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় জিন থেরাপির প্রয়োগ সীমিত। কিছু গবেষণামূলক প্রকল্প বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলতে পারে বিশেষায়িত কেন্দ্রে। তবে, স্থানীয় গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়লে এবং দাম কমলে ভবিষ্যতে এর অ্যাক্সেস বাড়তে পারে।

    2. পার্সোনালাইজড মেডিসিনের সুবিধা কী?
      পার্সোনালাইজড মেডিসিনের প্রধান সুবিধা হলো এটি রোগীভেদে চিকিৎসাকে কাস্টমাইজ করে। ফলে, চিকিৎসার কার্যকারিতা বাড়ে, অপ্রয়োজনীয় বা অকার্যকর ওষুধের ব্যবহার কমে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যয়ও দীর্ঘমেয়াদে কমাতে পারে। এটি রোগীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে।

    3. ইমিউনোথেরাপি কি সব ধরনের ক্যান্সারে কাজ করে?
      না, ইমিউনোথেরাপি সব ধরনের ক্যান্সারে সমানভাবে কার্যকর নয়। এর কার্যকারিতা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, পর্যায়, রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অবস্থা এবং টিউমারের নির্দিষ্ট বায়োমার্কার (যেমন PD-L1 এক্সপ্রেশন) এর উপস্থিতির উপর। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করেন কোন রোগীর জন্য ইমিউনোথেরাপি উপযুক্ত হবে।

    4. এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (AMR) মোকাবিলায় আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
      AMR মোকাবিলায় সকলের ভূমিকা আছে: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিনবেন না বা সেবন করবেন না। প্রেসক্রিপশন দেওয়া হলে কোর্স সম্পূর্ণ করুন, মাঝপথে বন্ধ করবেন না। অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ নিজে থেকে পরিবর্তন করবেন না। সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান-পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া ও টিকাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব অভ্যাস গড়ে তুলে আপনি সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি নিজের ও অন্যদের জন্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারেন।

    5. টেলিমেডিসিন কি আসলেই কার্যকর?
      হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী রোগের নিয়মিত ফলো-আপ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নেওয়া এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য টেলিমেডিসিন অত্যন্ত কার্যকর। তবে, জরুরি অবস্থা, শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয় এমন ক্ষেত্রে বা জটিল রোগের ক্ষেত্রে সরাসরি ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। টেলিমেডিসিন সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য।

    6. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কি একদিন ডাক্তারদের প্রতিস্থাপন করবে?
      এটা অসম্ভব। AI একটি শক্তিশালী টুল যা ডাক্তারদের সাহায্য করবে রোগ নির্ণয়ে, চিকিৎসা পরিকল্পনায়, গবেষণায় এবং প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা ও নির্ভুলতা বাড়াতে। কিন্তু রোগীর সাথে মানবিক সম্পর্ক স্থাপন, জটিল নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, সহানুভূতির সাথে খারাপ খবর দেওয়া – এই বিষয়গুলোতে মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। AI এবং ডাক্তারদের সহযোগিতা ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও শক্তিশালী করবে, প্রতিস্থাপন করবে না।

    এই মুহূর্তে, আপনার চারপাশে, গবেষণাগারে, ক্লিনিকে, হাসপাতালের ওয়ার্ডে – লড়াই চলছে। লড়াই শুধু জীবন বাঁচানোর নয়, জীবনকে পূর্ণতা দান করার। নতুন ঔষধ গবেষণার প্রতিটি অগ্রগতি, প্রতিটি যুগান্তকারী আবিষ্কার, যেন একেকটি আলোকবর্তিকা, যা অন্ধকারে আটকে পড়া অসংখ্য মানুষের পথ দেখায়। জিন থেরাপি থেকে টেলিমেডিসিন পর্যন্ত, এই যাত্রায় আমরা শুধু ওষুধ বা প্রযুক্তি আবিষ্কার করছি না, আবিষ্কার করছি সম্ভাবনার নতুন ভাষা। সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি আজ আর শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল নয়; এটি বিজ্ঞানের অক্লান্ত সাধনা, নীতিনির্ধারকদের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিষ্ঠা এবং প্রতিটি মানুষের সচেতন প্রচেষ্টার সম্মিলিত ফসল। এই চাবিকাঠি হাতে পেতে আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে – সঠিক তথ্য জানতে হবে, প্রয়োজনীয় টিকা নিতে হবে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সুস্থতাই আমাদের সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আজই সিদ্ধান্ত নিন – আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন, এই অমূল্য সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি নিজের হাতে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখুন।


    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    ‘ট্রায়াল ঔষধ গবেষণা চাবিকাখি জীবন জীবনের তথ্য নতুন প্রতিরোধ প্রযুক্তি লাইফস্টাইল সুস্থ
    Related Posts
    Urine

    সকালে হলুদ প্রস্রাব স্বাভাবিক নাকি সমস্যার লক্ষণ?

    July 15, 2025
    পাকা চুল

    মেহেদির সঙ্গে যা মেশালে পাকা চুল কালো হয়

    July 14, 2025
    দলিল

    ১২ বছর ধরে জমি দখলে থাকলেই মালিকানা? জানুন আইনি ব্যাখ্যা

    July 14, 2025
    সর্বশেষ খবর
    superman

    Superman Post-Credit Scenes Explained: James Gunn’s Bold Move in DC’s Reboot Strategy

    Iran president

    Iran President Masoud Pezeshkian Injured in Israeli Strike on Secret Tehran Facility: Inside the Covert Attack

    3 Sister

    এসএসসি পরীক্ষায় একসঙ্গে তিন বোনের জিপিএ-৫ অর্জন

    vivo x200 fe

    vivo X200 FE Set to Launch on July 23: Flagship Specs, 50MP Cameras, and 6500mAh Battery

    archita archita phukan viral video

    Archita Phukan Viral Video Scandal: Cyber Defamation, Justice, and the Fight for Online Dignity

    Best 5G Phones Under 20000 in Bangladesh

    Best 5G Phones Under 20000 in Bangladesh

    Gaming Desktop vs Laptop 2025: Ultimate Performance Comparison

    Gaming Desktop vs Laptop 2025: Ultimate Performance Comparison

    Akhtar

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হলেন ড. আখতার হোসেন

    twin-brothers

    এসএসসিতে সব বিষয়ে একই নম্বর পেয়ে চমকে দিল যমজ ভাই

    Willie Salim: The Versatile Force in Indonesian Entertainment

    Willie Salim: The Versatile Force in Indonesian Entertainment

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.