জুমবাংলা ডেস্ক: গত জুলাই মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেক অঞ্চলের কৃষক সেচ দিয়ে আমন চাষ করেছেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সবগুলো জেলায় সেচের পানি দিয়ে আমন চাষ শুরু করতে হয়েছে কৃষকের। বিদ্যুৎ ও তেল দিয়ে সেচের তুলনায় যারা সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সেচ দিচ্ছেন তাদের খরচ কম হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টির দেখা মিললেও পানির অভাবে আমন চাষ সঠিক সময়ে শুরু করতে পারেননি অনেক কৃষক। অনেক জেলায় সময় মতো আমন রোপণও ব্যাহত হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকের আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়ে দিয়েছে সোলার পাম্প।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ বা প্রায় ৯৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পাওয়া যায়। সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ৮৭৭টি সোলার পাম্প বসানো হয়েছে। এ থেকে ৫২ দশমিক ২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৫২৩টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করেছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। এ থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৭৯২টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধায় এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গত ২ আগস্ট পর্যন্ত চাষ হয়েছে ৩১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে গত ১ আগস্ট পর্যন্ত চাষ হয়েছে ৭২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি। বেশিরভাগ কৃষক সেচের পানিতে আমন রোপণ করেছেন।
বগুড়া সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সোলার পাম্পের মালিক রুহুল আমিন বলেন, আমার পাম্পের অধীনে এবার ২৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ১৫ দিন আগে থেকেই কৃষকরা ধান রোপণ করছেন। যেহেতু দেরিতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাই পুরো মৌসুমে সেচের জন্য প্রতি বিঘা জমি থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজস গ্রামের ডিপ টিউবওয়েলের মালিক আবদুর রউফ বলেন, সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে ধান চাষ শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ধান রোপণ এবং ৩ সেচ দেওয়া পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিচ্ছি। যদি আরো সেচ দিতে হয় তবে, কৃষককে বাড়তি ১ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বগুড়ায় সোলার পাম্প আছে ৭৯টি। এর মধ্যে চালু আছে ৬০টি। এ বছর এই ৬০টি পাম্পের অধীনে মোট ২৮৫ একর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। গাইবান্ধায় সোলার পাম্প আছে ৩৩টি। এগুলোর অধীনে বোরো মৌসুমে ধান চাষ হয় ৩০০-৩৫০ হেক্টর।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলেবুর রহমান বলেন, আমন চাষের জন্য ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে। তবে ছড়ার বয়স ৩০ দিন পার হয়ে গেলে ধানের ফলন জাত অনুযায়ী অবশ্যই কমবে। সেই কারণে অনেক কৃষক বর্ষা মৌসুমেও সেচ দিয়ে ধান চাষ করছেন। সোলার পাম্প আমাদের জন্য আশীর্বাদ। সোলার থাকলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। যে কোনো সময় অল্প খরচে ফসল চাষ করা যায়। এতে পরিবেশ দূষণ হয় না। সঠিক সময়ে ধান রোপণ করলে ফলনও ভালো হয়।
বগুড়া সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আবু জাফর সুজন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পেতে চায়। সোলার পাম্প স্থাপনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান পাম্প স্থাপনের কাজ নিয়েও তা স্থাপন করতে পারছে না।
ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এসেছিল নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। সে বছর মোট উৎপাদিত সৌরশক্তির প্রায় ৮ শতাংশ বা ৫০ দশমিক ৪ মেগাওয়াট এসেছিল অফ গ্রিড সোলার পাম্প থেকে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৭১৬টি সোলার সেচ পাম্প ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে সৌর সেচ ব্যবস্থা বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে সোলার সেচ ব্যবস্থা বাড়ানোর লক্ষ্য আছে। সংশোধিত এনডিসি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার ১৭৬ মেগাওয়াট সৌর সেচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।