এন আই আহমেদ সৈকত : একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি যুব সমাজ। টানা তিনবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অভূতপূর্ব। এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে রয়েছে যুব সমাজের অগ্রণী ভূমিকা। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ও মিশন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যুব সমাজকেই সবার আগে কাজে লাগাতে হবে।
তাছাড়া বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য যুব উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্মার্ট বাজেট প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
২০১৭ সালে দেশে যুব নীতিমালা হয়। যুব নীতিমালায় যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধি আর তাদের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনি দেশের শাসনব্যবস্থায় রাজনীতি ও সরকারি কার্যক্রম পরিচালনায় যুবদের অংশগ্রহণকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যুবকদের বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দেশে যুবদের বেকারত্বের হার সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সাল শেষে বেকার লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের যুবসমাজ শুধু পিছিয়ে পড়ে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাবে। ফলে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি গুরুত্ব সহকারে যুবদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক কর্মবাজারেও সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। যুব সমাজের নেতৃত্বই গড়ে উঠবে স্মার্ট সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
এমন পরিসংখ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেকার যুব সমাজের জন্য বিশেষ প্রণোদনামূলক বাজেট প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সংকট চলছে। ডলার সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু তার বিপরীতে প্রতি বছর শেষে কর্মক্ষম বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। যাদের একটি বড় অংশই কাজ না পেয়ে বেকার থাকছেন।
অর্থনীতির সংকট ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলার জন্য লড়াই করছে। বাংলাদেশও এই লড়াইয়ে যুক্ত। এই বৈশ্বিক সংকট প্রতিটি ক্ষেত্রে কঠোর চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। শিক্ষাখাতসহ অন্য খাত এবং বেকার যুবকদের আরও গভীর সমস্যায় ফেলেছে।
আসন্ন (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি যুব ছায়া সংসদ এর ১৪তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ছায়া সংসদে যুববান্ধব বাজেট, খাদ্যনিরাপত্তা ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
উত্থাপিত প্রস্তাবনা সমূহ হলো:
১. খাদ্য ব্যবস্থাপনায় যুববান্ধব বাজেট প্রণয়ন।
২. টেকসই খাদ্য উৎপাদনে তরুণদের জন্য বিভিন্ন কৃষিবান্ধব কর্মশালা ও গবেষণা প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।
৩. নিরাপদ ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদনে তরুণরা যাতে অংশ নিতে পারে তার জন্য যুববান্ধব বাজেট প্রয়োজন।
৪. নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে তরুণদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
৫. পরিবেশ দূষণ রোধে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় যুব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট বাজেট প্রণয়ন প্রয়োজন।
৬. যুব উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় যুবদের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৭. খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন মাত্রা যোগ দিতে নীতিনির্ধারণী মহলকে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৮. তরুণদের নিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ মনিটরিং সেল ও অ্যাপ তৈরি।
৯. কৃষিতে যুববান্ধব বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
১০. বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের কৃষিতে আকর্ষিত করতে কৃষি ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন।
প্রতি বছরই স্থানীয় পর্যায়ে যুবকদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তার মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। আবার এটা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বাকি ৬০ শতাংশ খরচ করার কোনো পরিকল্পনা থাকে না। দেশের যুবরা মনে করে এ ধরনের বাজেট প্রকল্পগুলোয় যদি তাদের সম্পৃক্ত করা হয়, তাহলে বাজেটে তাদের প্রত্যাশা ও করণীয় সম্পর্কে ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাজেটের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকেও যুব উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। যুবদের উন্নয়নের জন্য দেশজুড়ে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো যেন নির্ধারিত কাঠামো মেনে পরিচালনা করা হয়, সেদিকে সবার মনোযোগ দিতে হবে।
পাশাপাশি যুবদের প্রশিক্ষণ যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের যুবসমাজ শুধু পিছিয়ে পড়ে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাবে। ফলে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি গুরুত্ব সহকারে যুবদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক কর্মবাজারেও সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। যুব সমাজের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে স্মার্ট সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা।
[email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।