জুমবাংলা ডেস্ক : শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর উত্তরাংশের (হরিপুরাংশের) মূল সেতুর প্রারম্ভিক এ্যাবার্টমেন্টে নির্মিত অ্যাপ্রোস সড়ক যেকোন মুহূর্তে ধ্বসে গিয়ে মূল সেতু থেকে সংযোগ রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। দুইদিন আগে প্রবল বৃষ্টির পানির স্রোতে অ্যাপ্রোচ সংলগ্ন রাস্তাটি ধ্বসে যাওয়ায় রাস্তাটি সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু বালু দস্যুদের বালুবাহী ট্রলি স্থানীয়দের আপত্তিকে তুচ্ছ করে অ্যাপ্রোচ সড়কের ঢালুতে উঠিয়ে দিয়ে চলাচল করার কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ।
সংবাদ জানার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর মতে, চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে অ্যাপ্রোচ সড়কটি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অপুরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সমতল ভূমি থেকে ১৫ বা ২০ ফুট উচ্চতার এই সড়ক ধ্বসে পড়লে স্থানীয় জনবসতি চাপা পড়ার সঙ্গে প্রাণহানীর আশঙ্কাও রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১ নম্বর হাটশ হরিপুর ইউনিয়নবাসীর দুই দশকের দাবিতে মাত্র তিন বছর আগে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শেষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ হরিপুরবাসীর স্বপ্নের কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু জনগণের চলাচলের জন্য অবমুক্ত করে দেয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুটির উপর যতরকম অত্যাচার ও ক্ষতির কারণ একমাত্র বালুবাহী ট্রলি। ইতোপূর্বে স্থানীয়রা একাধিকবার আপত্তি ও প্রতিবাদ জানালেও কিছুই তোয়াক্কা করেনি বালুখোর চক্র। বেপরোয়া এসব ট্রলি চালিয়ে একাধিকবার এই সেতুর লাইট পোস্ট, বিদ্যুৎ কেবলসহ বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করলেও কারো সাহস নাই কিছু বলার। এমনকি এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে বালু উত্তোলকারী হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মিলন মন্ডল এবং সাধারণ সম্পাদক হাজি আরিফুল ইসলাম বালুবাহী ট্রলির কারণে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ধ্বসের দায় কে নেবেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এম সম্পা মাহমুদ বলেন, ওইখানে ব্রিজের ঢালু ধ্বসে গেছে এমন বিষয় আমার জানা নেই। তবে আপনি বলছেন আমি শহর থেকে ফেরার পথে দেখে যাবো।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোনীত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর নির্মাণকাল থেকে তদারককারী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ব্রিজের ঢালের উপর দিয়ে ট্রলি চালাবে কেন? ঠিক আছে আমি শুনলাম এ মুহূর্তে একটু বাইরে আছি তাই আগামী রবিবার একসময় গিয়ে আমি দেখব।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাসেল বলেন, যেকোন সেতুর নিরাপদ দূরত্বের মধ্যে থেকে কোনোভাবেই মাটি বা বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এই আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সেতুর নিরাপদ দূরত্ব হিসেবে তার রিভার্টমেন্ট জোনকে (প্রতি এক মিটার সেতুর দৈর্ঘের অনুপাতে আপ স্টিমে ধরা হয় এক দশমিক পাঁচ মিটার এবং ডাউন স্টিমে হবে দশমিক পাঁচ মিটার) বোঝানো হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, ব্রিজের রিভার্টমেন্ট জোন এলাকা থেকে কোনোভাবেই বালু বা মাটি কাটা যাবে না। এরা কে বা কারা এখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ব্রিজকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে, তা আমি সঠিক জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণকারী বিভাগ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, সংবাদটি জানানোর জন্য ধন্যবাদ। এ মুহূর্তে আমি একটু দূরে আছি। তবে তাৎক্ষণিক আমার থানা ইঞ্জিনিয়ারকে সেখানে যেতে বলছি। সরেজমিন দেখার পর যা করনীয় তার উদ্যেগ নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।