আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পূর্ব চীনের একটি ছোট শহরে বেড়ে উঠেছেন ২৪ বছর বয়সী লি জিয়াউমিং। স্বপ্ন ছিল বড় শহরে যাওয়ার। ভালো চাকরি পেয়ে আরও ভালো জীবনযাপন করার। কিন্তু এর মধ্যেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এ তরুণ।
দেশজুড়ে লির মতো অনেক তরুণ জানান, পড়াশোনা ও চাকরির ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ইঁদুর দৌড়ের মতো তারাও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই জীবন কাটাতে চান। তাদের এ নতুন জীবন দর্শনকে বলা হচ্ছে ‘ট্যাং পিং’ বা ‘লাইয়িং ফ্ল্যাট’।
চীনা সার্চ জায়ান্ট বাইডু পরিচালিত একটি অনলাইন ফোরামে এ বছরের শুরুতে একটি পোস্টে এ শব্দটির খোঁজ পাওয়া যায়।
অনলাইন ফোরামের পোস্টে লেখা হয়, অ্যাপার্টমেন্ট ও আভিজাত্যের পারিবারিক মূল্যবোধের পেছনে ছুটে নিজের সারা জীবন ব্যয় করার পরিবর্তে মানুষকে একটি সাধারণ জীবনযাপন বেছে নেওয়া দরকার। যদিও পরে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়।
অন্যদিকে, লাইয়িং ফ্ল্যাটের আলোচনা বাড়তে থাকে পুরো চীনজুড়ে যেখানে তরুণরা ভালো, আকর্ষণীয় চাকরি বিশেষ করে প্রযুক্তি বা অন্য কোনো কায়িক শ্রমের চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত। দেশটিতে প্রাইভেট কোম্পানি বেড়ে যাওয়ায় অন্য এক ধরনের কাজের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
বেশিরভাগ প্রযুক্তি ফার্মগুলো সপ্তাহে কাজের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ লাইয়িং ফ্ল্যাট মুভমেন্ট, যেখানে এ প্রতিযোগিতার মধ্যে যেতে হবে না।
এই ফিনোমেনা শুধু চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পূর্ব এশিয়াজুড়ে তরুণরা স্বল্প বেতনে অধিক কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে তারা একধরনের হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিয়ের পর তরুণরা বাড়ির মালিক হতে পারেন। জাপানে তরুণরা এতটাই হতাশ যে তারা জানেন না ভবিষ্যৎ কোথায় এবং সে কারণে ভৌত অবস্থা এড়িয়ে চলেন। বেশিরভাগ তরুণ হতাশ হয়ে পড়ছেন এবং চাপ নিতে চাইছেন না। অনেকে বিয়ে কিংবা সন্তান নেওয়ারও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার কেইম্যুং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিম উন-তাইক বলেন, তরুণরা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তারা জানেনই না কেন তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
লি পড়াশোনা শেষ করেন আইন বিষয় নিয়ে। চীনের যতগুলো আইনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনে থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হন লি।
বেইজিংভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফার্মে চাকরি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশাও করেন। কিন্তু যখন চাকরির আবেদন করেন তখন অন্তত ২০টি ফার্ম থেকে প্রত্যাখ্যাত হন। পরে ট্রেইনি হিসেবে যুক্ত হন একটি দেশিয় ফার্মে।
তিনি জানান, দেখলাম প্রচুর প্রতিযোগিতা। আমার মতো হাজার হাজার তরুণ চেষ্টা করছে। আমি হতাশ হয়ে পড়ি। প্রতিযোগিতায় যেতে নারাজ। তিনি নিজেই এ ট্যাং পিং-এর মধ্যে আছেন। সাধারণ জীবনযাপনই তার কাম্য এখন।
ট্যাং পিং হচ্ছে স্থিতাবস্থা নিয়ে লড়াই, উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হওয়া, এত কঠোর পরিশ্রম না করা। এটি এতোটাই সাড়া ফেলেছে যে ডাউবেন নামে সামাজিক সংগঠন তৈরি হয়েছে, যারা মেনিফেস্টোতে বর্ণনা করছে, ট্যাং পিং লাইফস্টাইল নিয়ে।
এতে বলা হচ্ছে, আমি বিয়ে করবো না, না বাড়ি কিনবো না আমার বাচ্চা থাকবে। আমি কোনো ব্যাগ, পোশাক লোক দেখানোর জন্য কিনবো না।
এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন হাজারের বেশি তরুণ। হ্যাশট্যাগ দিয়ে চীনের উইবোতে সমানতালে চলছে টুইটও।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।