জুমবাংলা ডেস্ক : স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে এবার মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার ডকুমেন্টের স্ট্যাম্প গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে।
স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহানাজ বেগম নামে এক ভুক্তভোগী।
শাহানাজ বেগম লালমনিরহাট শহরের বিডিআরগেট খোচাবাড়ি এলাকার নবীয়ার হোসেনের স্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান আলীর মেয়ে। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের রানিং বেয়ারা পদের কর্মচারী।
এর আগে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলমের নিজ অফিস কক্ষে বসে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরেই ওসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এমনই একজন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম। তিনি বিচার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ জানা গেছে, রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে শাহানাজ বেগমের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটের লস্কর তৈয়াবুর রহমান টিপুর পরিচয় হয়। এরই সুবাদে তৈয়াবুর রহমান টিপু শাহানাজের ছেলে সোহানুর রহমান মিমকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কয়েক দফায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। টাকার প্রমাণ স্বরুপ গত ২০১৫ সালের ১০ মে তারিখে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন তৈয়াবুর রহমান টিপু। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে সব টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তৈয়াবুর রহমান। সেই টাকা আজ কাল বলে কালবিলম্ব করায় স্ট্যাম্পমুলে মামলার প্রস্তুতি নেন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম।
বিষয়টি টের পেয়ে তৈয়াবুর রহমান সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম ও সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে শাহানাজের বাড়িতে আসেন। এ সময় মিমাংসার কথা বলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা দেওয়ার প্রমাণের চুক্তিনামার স্ট্যাম্পটি খোদ ওসি মাহফুজ আলম হাতিয়ে নেন এবং তার স্বামী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে আসেন বলে ভুক্তভোগী শাহানাজের অভিযোগ।
পরদিন শাহানাজের স্বামী ও ছেলেকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আপোস মিমাংসার কাগজে একটি এবং সাদা কাগজে আরেকটি একটি স্বাক্ষর নেন ওসি মাহফুজ আলম। এ ঘটনা অন্য কাউকে জানালে পুনরায় স্বামী ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শাহানাজ।
ওসি মাহফুজ আলমের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকার চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্প উদ্ধার করে প্রতারক তৈয়াবুর রহমানের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন শাহানাজ বেগম।
এ বিষয়ে শাহানাজ বেগম বলেন, ‘তৈয়াবুর আমার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। পরে তৈয়াবুরের মোটা অঙ্কের টাকার জোরে ওসি মাহফুজ আমার বাড়িতে এসে ড্রয়ার ভেঙে স্ট্যাম্পগুলোসহ ছেলে ও স্বামীকে ধরে নিয়ে যান। টাকা ছাড়াই আপোসের কাগজে স্বাক্ষর করে ছেলে ও স্বামীকে ছাড়িয়ে আনি। তাদেরকে ছাড়তেও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান এসপি ভালো মানুষ তাই তার কাছে বিচার চেয়েছি।’
এ বিষয়ে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওসি মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।