রাত তিনটা। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ৫২ বছর রফিকুল ইসলাম হঠাৎ ঘেমে উঠলেন। বুকটা চেপে ধরার মতো ব্যথা। ভাবলেন হয়তো গ্যাস্ট্রিক। ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লেন। সকালে তাকে নেয়া হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে…। বাংলাদেশ হৃদয় ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক (২০২৩) জরুরি পরিসংখ্যান বলছে: দেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ৪০% ঘটে প্রথম ১ ঘণ্টার মধ্যে, আর ৭০% রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাণ হারান, শুধুমাত্র লক্ষণ চিনতে না পারার কারণে। এই মৃত্যুগুলো কিন্তু ঠেকানো সম্ভব। চাবিকাঠি একটাই: হার্ট অ্যাটাকের আগের লক্ষণ সময়মত চিনে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া। এই লেখাটি শুধু তথ্য দেয় না, আপনার বা প্রিয়জনের জীবন বাঁচানোর হাতিয়ার হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের আগের লক্ষণ: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
“মিনিটের হিসেবেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য!” – ডা. ফরিদা খানম, কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। হার্ট অ্যাটাক মানে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে ব্লকেজ। সময়মত চিকিৎসা না পেলে হৃদপেশি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মৃত্যু ঘটে। “গোল্ডেন আওয়ার” – প্রথম ৯০ মিনিটের ভিতর চিকিৎসা শুরু হলে বেঁচে যাওয়ার হার প্রায় ৯০%। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেকের ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো হঠাৎ ও প্রচণ্ড আকারে আসে না। সূক্ষ্ম, অস্পষ্ট, বা ভিন্ন রকমের লক্ষণ দেখা দিতে পারে দিন, সপ্তাহ এমনকি মাসখানেক আগে থেকেই। এই সতর্ক সংকেতগুলো চিনতে পারাটাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়ানোর প্রথম ও প্রধান ধাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০২৪ সালের গ্লোবাল হার্ট রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে: “Early symptom recognition is the single most effective way to reduce heart attack mortality in low-resource settings like Bangladesh.”
হার্ট অ্যাটাকের আগের ১০টি সতর্ক সংকেত: এক নজরে দেখে নিন
(নিচের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটিও অবহেলা করবেন না, বিশেষ করে যদি আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা পারিবারিক ইতিহাস থাকে)
১. অস্বস্তিকর বুকে চাপ, ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
- কেমন লাগে: ভারী কিছু চেপে ধরে আছে, শক্ত করে বেঁধে ফেলা হয়েছে, বা উনুনের আগুনে পোড়ার মতো জ্বালা।
- স্থায়িত্ব: কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় ধরে। আসে-যায়।
- অবস্থান: সাধারণত বুকের মাঝখান বা বাম পাশে। চোয়াল, গলা, পিঠ, বাম কাঁধ বা বাহু (বিশেষ করে বাম হাতের ভেতরের দিক) পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
- বাস্তব উদাহরণ: দিনাজপুরের কৃষক আব্দুল মজিদ (৫৮) বললেন, “মনে হচ্ছিল বুকে যেন একটা মাটির কলসি চাপ দিছে। ভাবছিলাম গরমে হালকা বুক ধড়ফড়। পরে জানলাম সেটা হার্টেরই সংকেত ছিল।”
২. শ্বাসকষ্ট বা দম বন্ধ হয়ে আসা অনুভূতি
- কখন হয়: সামান্য হাঁটাচলা, সিঁড়ি ভাঙা বা বিশ্রামের সময়ও।
- কারণ: হৃদপিণ্ড দুর্বল হলে ফুসফুসে রক্ত ও তরল জমে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- গুরুত্ব: বিশেষজ্ঞরা একে “Silent Chest Pain” বলেন। অনেকেরই বুকে ব্যথা না হয়ে শুধু শ্বাসকষ্টই প্রধান লক্ষণ (বিশেষ করে মহিলা ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে)।
৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা
- কেমন লাগে: গভীর দুর্বলতা, যেন শক্তিটা সরে গেছে। দিনের পর দিন ক্লান্তি।
- কাদের বেশি হয়: প্রায়ই মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রধান পূর্ব লক্ষণ।
- কেন হয়: হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করতে কষ্ট করলে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টির ঘাটতি হয়।
- উদাহরণ: চট্টগ্রামের স্কুল শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার (৪৮) বলেন, “ঘরের সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে উঠতাম, মনে হতো শরীরে রক্তই নেই। পরে ডাক্তার বললেন হার্টের রক্তনালী সরু হয়ে যাচ্ছিল।”
৪. বমি বমি ভাব, বমি বা পেটে অস্বস্তি
- মিথ ভাঙা: অনেকেই মনে করেন হার্টের সমস্যার সাথে পেটের সম্পর্ক নেই! কিন্তু হৃদপিণ্ডের নিচের দিকের অংশে রক্ত চলাচল কমে গেলে পেটে অস্বস্তি, বমিভাব বা ব্যথা হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিকের সাথে পার্থক্য: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সাধারণত খালি পেটে বা ভাজাপোড়া খেলে বাড়ে, অ্যান্টাসিডে কমে। হার্টের ব্যথা এর সাথে সম্পর্কিত নয় এবং শারীরিক পরিশ্রমে বাড়ে।
৫. ঠাণ্ডা ঘাম বা অতিরিক্ত ঘামানো
- কেমন লাগে: হঠাৎ করে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ঘাম ঝরতে শুরু করে, বিশেষ করে কপালে ও হাত-পায়ে।
- গুরুত্ব: এটি হার্ট অ্যাটাকের অতি জরুরি সংকেত, বিশেষ করে বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের সাথে হলে।
৬. মাথা ঘোরা বা হালকা মাথা বোধ করা
- কারণ: হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে না পারলে।
- ঝুঁকি: পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৭. অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা বা “আসন্ন বিপদের” অনুভূতি
- কেমন লাগে: হঠাৎ করেই প্রচণ্ড আতঙ্ক, ভয়, অস্বাভাবিক অস্থিরতা।
- শারীরিক কারণ: হার্টের পেশি অক্সিজেনের অভাবে সঙ্কেত দিলে স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হয়।
৮. ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা পেটের উপরের অংশে ব্যথা
- বিশেষত্ব: বুকে ব্যথা ছাড়াই শুধুমাত্র এই স্থানগুলোতে ব্যথা হতে পারে (Referred Pain)।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে: চোয়াল বা পিঠে ব্যথা মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ একটি পূর্ব লক্ষণ।
৯. অনিয়মিত বা দ্রুত হৃদস্পন্দন
- কেমন লাগে: হঠাৎ করেই হৃদপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হওয়া, ধড়ফড় করা, বা ছন্দ হারিয়ে ফেলা।
- কখন সিরিয়াস: যদি এই ধড়ফড়ানি হঠাৎ শুরু হয়, দীর্ঘসময় ধরে থাকে, বা মাথা ঘোরা/বুকে ব্যথার সাথে আসে।
১০. অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ
- অনিদ্রা: অজানা কারণে ঘুমের ব্যাঘাত।
- পা ফোলা: হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়লে পায়ে পানি জমতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি: হৃদপিণ্ডের দুর্বলতায় ফুসফুসে তরল জমলে।
কেন এই লক্ষণগুলো এত ভিন্ন হয়? কার কী লক্ষণ বেশি দেখা দিতে পারে?
সব হার্ট অ্যাটাক এক রকম হয় না। লক্ষণ নির্ভর করে:
- ধমনীর কোন অংশ বন্ধ হয়েছে: সামনে, পিছনে, নিচে – প্রতিটির লক্ষণ আলাদা।
- ব্যক্তির বয়স ও লিঙ্গ:
- পুরুষদের: প্রায়শই ক্লাসিক বুকে ব্যথা, বাম বাহুতে ব্যথা।
- মহিলাদের: অস্বাভাবিক লক্ষণ বেশি দেখা যায় – শ্বাসকষ্ট, বমিভাব, পিঠ/চোয়ালে ব্যথা, চরম ক্লান্তি। (সূত্র: American Heart Association Journal, 2023)
- বয়স্ক ব্যক্তি (>৭৫): শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তি, হঠাৎ দুর্বলতা, অজ্ঞান হয়ে পড়া বেশি সাধারণ। বুকে ব্যথা নাও থাকতে পারে।
- অন্যান্য রোগের উপস্থিতি:
- ডায়াবেটিস রোগী: স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় (নিউরোপ্যাথি) ব্যথার অনুভূতি কম হয়। “নীরব হার্ট অ্যাটাক” (Silent Heart Attack) হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট, বমিভাব বা হঠাৎ দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপ/কোলেস্টেরল: ইতোমধ্যেই ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় লক্ষণ তীব্রতর হতে পারে।
“নীরব হার্ট অ্যাটাক” কী? কেন এত বিপজ্জনক?
- সংজ্ঞা: যে হার্ট অ্যাটাকে কোনো লক্ষণই থাকে না, বা লক্ষণ এতই হালকা ও অস্পষ্ট থাকে যে রোগী তা গুরুত্ব দেয় না বা অন্য সমস্যা মনে করে।
- পরিসংখ্যান (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট): জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০% হার্ট অ্যাটাক “নীরব” হয়।
- বিপদ: রোগী বুঝতেই পারে না যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। পরে রুটিন চেকআপে ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রামে ধরা পড়ে। এতে হৃদপেশির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়, পরবর্তীতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া (হার্ট ফেইলুর) বা আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ।
- কাদের ঝুঁকি বেশি: ডায়াবেটিস রোগী, বয়স্ক ব্যক্তি, ধূমপায়ী, দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগী।
হার্ট অ্যাটাকের আগের লক্ষণ দেখা দিলে কী করবেন? জরুরি পদক্ষেপ
প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান! এই স্টেপগুলো মনে রাখুন:
- শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হলে হৃদস্পন্দন আরও বাড়বে। গভীর শ্বাস নিন।
- সব কাজ বন্ধ করুন: দাঁড়ানো, হাঁটা, কোনো ভারী কাজ করা বন্ধ করুন। বসে পড়ুন বা হালকা করে শুয়ে পড়ুন।
- জরুরি সাহায্য ডাকুন (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!):
- ফোন করুন: ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর)।
- বলুন: “আমার হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।” আপনার ঠিকানা স্পষ্ট করে বলুন।
- আম্বুলেন্সের অপেক্ষা করুন: নিজে গাড়ি চালিয়ে বা রিকশায় করে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
- যদি প্রেসক্রাইব করা থাকে:
- এসপিরিন (Aspirin) ৩০০ মিলিগ্রাম: চিবিয়ে খান (যদি অ্যালার্জি না থাকে এবং ডাক্তার আগে দিয়েছেন)। এটি রক্ত জমাট বাঁধা কমাতে সাহায্য করে।
- নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে: জিহ্বার নিচে স্প্রে করুন (যদি ডাক্তার দিয়েছেন)।
- জ্ঞান হারালে (CPR):
- রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে শক্ত সমতল জায়গায় চিত করে শুইয়ে দিন।
- জ্ঞান হারালে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকলে: তাত্ক্ষণিকভাবে কার্ডিওপালমোনারি রেসাসিটেশন (CPR) শুরু করুন।
- হাত দুটো একটির উপর আরেকটি রেখে বুকের মাঝখানে (স্তনের হাড়ের নিচে) শক্ত চাপ দিন।
- প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার দ্রুত গতিতে চাপ দিন।
- মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে পারলে ৩০টি চাপের পর ২টি শ্বাস দিন (প্রশিক্ষণ না থাকলে শুধু চাপ দিতে থাকুন)।
- বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির CPR গাইড দেখুন বা প্রশিক্ষণ নিন।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা
লক্ষণ চিনে জরুরি চিকিৎসা নেয়া জীবন বাঁচায়, কিন্তু প্রতিরোধ করা আরও জরুরি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেনে চলুন এই সহজ উপায়গুলো:
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
- ধূমপান ত্যাগ: হার্ট অ্যাটাকের এক নম্বর প্রতিরোধযোগ্য কারণ।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
- বাড়িতে রান্না করা টাটকা খাবার (সবজি, ফল, ডাল, মাছ)।
- লবণ, চিনি, তেল (বিশেষ করে পাম অয়েল, ডালডা), ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার (নুডলস, প্যাকেটজাত জুস, কোল্ড ড্রিংকস) কম খান।
- বাংলাদেশ পুষ্টি সমিতির ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে ৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: বিশেষ করে পেটের মেদ কমানো জরুরি।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: ধ্যান, ইয়োগা, প্রার্থনা, গান শোনা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- রক্তচাপ: মাসে অন্তত একবার মাপুন। লক্ষ্য: <১৪০/৯০ mmHg (ডায়াবেটিস থাকলে <১৩০/৮০)।
- রক্তে শর্করা (ডায়াবেটিস): বছরে একবার ফাস্টিং ও PP পরীক্ষা করুন।
- রক্তে চর্বি (লিপিড প্রোফাইল): প্রতি ৫ বছরে (ঝুঁকি থাকলে বছরে)। LDL (“খারাপ” কোলেস্টেরল) কম রাখুন।
- বডি মাস ইনডেক্স (BMI): ১৮.৫ – ২২.৯ kg/m² এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, ৪০ বছরের পর নিয়মিত কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিন।
জেনে রাখুন (FAQs)
Q1: বুকে ব্যথা ছাড়া শুধু পিঠে বা চোয়ালে ব্যথা হলে কি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে?
A: হ্যাঁ, অবশ্যই হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই সাধারণ। হার্টের পেশিতে রক্ত চলাচল কমে গেলে ব্যথার সংকেত আশেপাশের স্নায়ুর মাধ্যমে চোয়াল, পিঠ, ঘাড়, এমনকি পেটের উপরের অংশেও পৌঁছাতে পারে। একে রেফার্ড পেইন বলে। এমন ব্যথা, বিশেষ করে যদি শ্বাসকষ্ট, বমিভাব বা ঘামের সাথে আসে, অবশ্যই জরুরি হিসেবে নিতে হবে।
Q2: আমি তরুণ/তরুণী, আমার কি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে? লক্ষণ দেখলে কী করব?
A: বয়স কম হলেই ঝুঁকিমুক্ত নন। বংশগতি, ধূমপান, ড্রাগস, অতি মাত্রায় ফাস্ট ফুড, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ তরুণদেরও হার্ট অ্যাটাকের শিকার করছে। লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন: হঠাৎ প্রচণ্ড বুকে ব্যথা/চাপ, শ্বাসকষ্ট, বাম হাতে ব্যথা, হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া) কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না। তাত্ক্ষণিক ৯৯৯ এ কল করুন বা নিকটস্থ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যান।
Q3: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা আর হার্টের ব্যথার পার্থক্য কীভাবে বুঝব?
A: পার্থক্য করা কঠিন, তবে কিছু দিক দেখুন:
- হার্টের ব্যথা: সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে চাপ বা জ্বালা। শারীরিক পরিশ্রমে (হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা) বাড়ে, বিশ্রামে কিছুটা কমে। ঘাড়/চোয়াল/বাম বাহুতে ছড়াতে পারে। শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা ঘাম, বমিভাব থাকতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা: সাধারণত বুকের নিচে/পেটের ওপরে জ্বালাপোড়া বা টানটান ভাব। ভাজাপোড়া, মসলাদার খাবার বা খালি পেটে বাড়ে। অ্যান্টাসিড খেলে দ্রুত কমে। খুব কমই ঘাড়/বাহুতে ছড়ায়।
সন্দেহ হলে: হার্টের ব্যথা ভেবে জরুরি ব্যবস্থা নিন। ভুল করলে সমস্যা নেই, কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হলে অবহেলা করলে প্রাণ সংশয়।
Q4: ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুঝব কীভাবে?
A: ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় (নিউরোপ্যাথি), ফলে ব্যথা কম অনুভূত হয়। আপনার জন্য “নীরব” বা অস্বাভাবিক লক্ষণগুলোই গুরুত্বপূর্ণ:
- হঠাৎ বা ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট।
- অত্যাধিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- ঠাণ্ডা ঘাম।
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়া।
- পেটের উপরে অস্বস্তি।
ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত কার্ডিয়াক চেকআপ (ইসিজি, ইকো, স্ট্রেস টেস্ট) করানো এবং সব অস্বস্তিকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
Q5: হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে ঘরোয়া কোনও প্রতিকার (যেমন: গরম পানি, লেবুপানি) খাওয়া কি ঠিক?
A: একদমই নয়! এসব ঘরোয়া প্রতিকার হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা করে না এবং মূল্যবান সময় নষ্ট করে। এতে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। একমাত্র জরুরি ব্যবস্থা হল: তাত্ক্ষণিক ৯৯৯ এ কল করা এবং হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যাওয়া।
সতর্ক সংকেতগুলো চিনুন, সময় নষ্ট করবেন না। হার্ট অ্যাটাকের আগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিটি মিনিট অমূল্য। আপনার সতর্কতাই পারে আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনকে হৃদরোগের নির্মম পরিণতি থেকে রক্ষা করতে। আজই এই তথ্যগুলো পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করুন। সচেতনতাই পারে অকাল মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে। মনে রাখবেন, আপনার জীবন অমূল্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।