জুমবাংলা ডেস্ক : প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি তোলেন প্রতারক প্রেমিক হৃদয় বিশ্বাস। সেই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। এক সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন কলেজছাত্রী। পরে বিয়ের আশ্বাসে গর্ভপাত করায় হৃদয় বিশ্বাস ও তার পরিবার। আর এরপর থেকেই পলাতক হৃদয়। এ ব্যাপারে মামলা করায় ওই কলেজছাত্রীকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
সোমবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ওই তরুণী।
তিনি জানান, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় এসেই তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা। প্রতারক প্রেমিক হৃদয় বিশ্বাস ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের ছেলে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বর্তমানে অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘হৃদয় আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। প্রেমের অভিনয় করে আমাকে ব্লাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্ক করে। একপর্যায়ে আমি ওর থেকে দূরে সরে আসতে চাই, কিন্তু হৃদয় তখন আমার নগ্নছবি বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে দিয়ে দেয় এবং ভয় দেখায়। তখন লোকলজ্জার ভয়ে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি পুনরায় ওর কথায় রাজি হয়ে একাধিকবার মেলামেশা করি।
আমি এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। তখন হৃদয়, ওর মা, বাবা ও বোন আমাকে বলে পেটে বাচ্চা থাকলে বিয়ে কীভাবে হবে। সমাজের মানুষ কী বলবে। তুমি গর্ভপাত করে ফেলো, তারপর বিয়ের ব্যবস্থা করছি। তাদের ছলনাময়ী কথায় আমি রাজি হয়ে যাই।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘হৃদয়ের মা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের বাড়িতে এসে বিয়ের কথা বলে আমাকে ৪টি ট্যাবলেট দিয়ে খেতে বলে। ওই ওষুধ খাওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এ খবর হৃদয়ের মা পেয়ে আমাকে পাশের সদরপুর উপজেলার পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে হৃদয়ের বোন ডা.সুরঞ্জনা বিশ্বাসের চেম্বার রয়েছে। তিনি আমার গর্ভপাতের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। এরপর সেখান থেকে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর আমি সুস্থ হই। কিন্তু তারা আর কোনো খবর নেয়নি আমার।’
ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। আমার বাবা একটি অফিসে পিওনের চাকরি করতেন। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে প্যারালাইজড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। তার চাকরি এখন কোনোরকম করছেন অসুস্থ মা। আমরা দুই বোন। আমি বড়, ছোট একটি বোন রয়েছে। একদিকে দারিদ্র্যতার কারণে সংসারই ঠিকমতো চলে না, আবার এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলাম। বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। হৃদয়ের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় আমার পাশে কেউ নেই।
তিনি জানান, হৃদয়ের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো পাত্তা পান না তিনি। একদিকে সংসার চলছে না, তারপর প্রেমিক হৃদয়ের কাছ থেকে ধোঁকা খাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
কোনো উপায় না পেয়ে গত ১১ এপ্রিল ওই নিজে বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় প্রেমিক হৃদয় বিশ্বাস (২০), হৃদয়ের মা করবী দস্তিদার বিশ্বাস (৫০), তার বোন ডা. সুরঞ্জনা বিশ্বাস (৩০) ও কাকা বিমল বিশ্বাসের (৩৮) নামে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর প্রেমিক হৃদয়সহ সবাই গা ঢাকা দেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে হৃদয়ের মা করবী দস্তিদার বিশ্বাস, হৃদয়ের বোন ডা. সুরঞ্জনা বিশ্বাস ও কাকা বিমল বিশ্বাস জামিন নিয়ে এলাকায় আসেন। হৃদয় এখনও পলাতক।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল মোল্যা বলেন, ‘মেয়েটি যে মামলা করেছে, ওই মামলার সাক্ষী আমি। শুধু ওই মেয়েটিকেই নয়, আমাকেও বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ওদের পাশে কেউ দাঁড়াতে গেলেই তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান বলেন, ‘ওই মেয়েটিকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কাছেও করেছে মেয়েটি। মেয়েটির সঙ্গে ওই ছেলেটি ও তার পরিবার যা করেছে তা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমিও চাই মেয়েটি ন্যায় বিচার পাক। মেয়েটির পাশে অবশ্যই আমি ও আমার পরিষদ রয়েছে।’
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘ওই ছাত্রী বাদী হয়ে প্রেমিক হৃদয় বিশ্বাস, হৃদয়ের মা করবী দস্তিদার বিশ্বাস, তার বোন ডা. সুরঞ্জনা বিশ্বাস ও কাকা বিমল বিশ্বাসের নামে মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালত থেকে তিন জন জামিন নিয়ে এসেছে জেনেছি। তবে হৃদয় পলাতক রয়েছে। হৃদয়কে আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে হুমকি ধামকির বিষয়ে ওসি বলেন, ‘ওই ছাত্রী বা তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি তাদের ভয়ভীতি বা হুমকি দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ দিলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।