জুমবাংলা ডেস্ক : দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও চিলিতে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে ‘পেপ্যাল’। বাংলাদেশে এদের কোনো শাখা না থাকলেও আন্তর্জাতিক পেমেন্টের ক্ষেত্রে অনেক প্রবাসী এ গেটওয়ে ব্যবহার করেন। তবে এটি কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্র। এ চক্র থেকে ডলার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
অভিযোগ পেয়ে চলতি মাসে বাংলাদেশে এ চক্রের হোতা রাশেদুল ইসলামকে রংপুরের হারাগাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে এই প্রতারণার অনেক তথ্য।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ আমেরিকাভিত্তিক একাধিক হ্যাকার চক্র প্রথমে ওই সব দেশের পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে হ্যাকার চক্র ওই অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ সরায় না। এর পর হ্যাক করা অ্যাকাউন্টগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে খুব কম দামে তারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করে। চক্রগুলো পরে ওই অ্যাকাউন্টে থাকা ডলার বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। তাদের দেওয়া অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে কেউ ডলার কিনলেই সর্বনাশ।
কারণ, পেপ্যালের কোনো গ্রাহক যদি কাস্টমার কেয়ারে তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন, সেটা তদন্ত করে দেখে প্রতিষ্ঠানটি। সত্যতা পেলে প্রকৃত গ্রাহককে ওই অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট থেকে সার্ভিস বা পেমেন্ট হিসেবে লেনদেন করা অর্থ ফেরত পেতে ৬০ দিন পর্যন্ত ডিসপুট (লেনদেন বিতর্ক) ক্লেইম করা যায়। এর পর তদন্তে সত্যতা পেলে যেই অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে ফেরত নিয়ে প্রকৃত গ্রাহককে ফিরিয়ে দেয় পেপ্যাল।
বাংলাদেশের প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এখানেই। এখানে পেপ্যালের অফিস না থাকায় বৈধভাবে অ্যাকাউন্টে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে তারা বিভিন্ন পেপ্যাল অ্যাকাউন্টধারীর মাধ্যমে অনলাইনে ডলার কেনেন। আর এ সুযোগই কাজে লাগায় প্রতারক চক্র।
সর্বশেষ জুবাইর সিরাজ নামে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা সিরাজুল ইসলাম গত ১১ মে রাজধানীর বাড্ডা থানায় এমন প্রতারণার একটি মামলা করেন। তদন্তে নেমে আন্তর্জাতিক পেপ্যাল প্রতারণা চক্রের সন্ধান পান তদন্ত কর্মকর্তা। এর পর ১৪ মে রংপুরের হারাগাছ থেকে রাশেদুলকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
রাশেদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক এ প্রতারক চক্রের একটি বাজার রংপুরের হারাগাছ থানা। এখানকার পাঁচ শতাধিক যুবক এ প্রতারণায় জড়িত। তাদের হোতা চায়না থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারপড়ুয়া রাশেদুল। সেখানে পড়ালেখার সময় এ চক্রে জড়ান তিনি। দেশে ফিরে পেপ্যাল প্রতারণা চক্র গড়ে তোলেন। ২০২১ সাল থেকে রাশেদুল এ চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা এখন পর্যন্ত প্রবাসী শিক্ষার্থীদের কাছ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, চক্রের আরিফ, রায়হান, মুকুল, তারিক, মান্নান, রফিকুল, আব্বাসসহ শতাধিক যুবককে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আর রাশেদুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রতারণার শিকার জুবাইর সিরাজ জানান, ফিনল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি পরিশোধ করার জন্য ডলার কিনতে গিয়ে ফেসবুকে ২১ ফেব্রুয়ারি খায়রুল ইসলাম (যাঁর প্রকৃত নাম রাশেদুল) নামে একজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ১৯ মার্চ থেকে তাঁর কাছ থেকে ধাপে ধাপে ১ হাজার ১৩৮.৫ ডলার কেনেন তিনি। এর জন্য তিনি বিকাশের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৭৯১ টাকা দেন।
তিনি জানান, তবে পুরো অর্থ ভেঙে ভেঙে পাঠানোয় তাঁর সন্দেহ হয়। এ ছাড়া খরচ বাঁচাতে পেপ্যালের এফএনএফের মাধ্যমে ডলার পাঠাতে বললে খায়রুল দেননি। ডলার পাঠানোর যত খরচ– সব বহন করতেও চান। সব মিলে বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি। এর পরই ৩০ এপ্রিল ৫৭১.২৩ ডলার ডিসপুট ক্লেইম করে পেপ্যাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে খায়রুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্লক করে দেন।
সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী কমিশনার আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, পেপ্যাল প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে নেমে আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। হারাগাছ থানার কয়েকশ যুবক এ প্রতারণায় জড়িত বলেও প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। এ প্রতারণায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।