আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্বামী-সহ ছ’জনকে খুনের ঘটনায় এক গৃহবধূকে গ্রেফতার করল কেরল পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংগঠিত হয়। দীর্ঘ চোদ্দ বছর ধরে পরিকল্পনা করে ওই মহিলা একের পর এক এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানায় পুলিশ। কেরালার কোঝিকোড়ের এ ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে। এমন খবর জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ওই মহিলার নাম জলি পোন্নামাট্টম। প্রথম খুনের পর ১৭ বছর কেটে গেলেও, এত দিন গোটা বিষয়টি আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগ পেয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে বিষয়টি সামনে আসে। জলি থমাস তার স্বামীর পরিবারের সদস্যদের বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন।
পুলিশ জানায়, ২০০২ সালে, ৫৭ বছর বয়সে আচমকাই মারা যান জলির শাশুড়ি আন্নাম্মা টমাস। সেইসময় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তার ঠিক ছ’বছর পর মারা যান জলির শ্বশুর টম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
২০১১ সালে, ৪০ বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অভিযুক্ত জলির স্বামী রয় টমাস। সেইসময় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিষক্রিয়ার বিষয়টি উঠে আসলেও তদন্ত সে ভাবে এগোয়নি। এরপর ২০১৪ সালে আন্নাম্মার ভাই ম্যাথু একই ভাবে মারা যান।
এর ঠিক দু’বছর পর, ২০১৬ সালে মারা যান রয় টমাসের চাচাতো ভাই শাজুর স্ত্রী এবং দু’বছরের মেয়ে অ্যালফনসার। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পর পর মৃত্যুর ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার। এরপর শাজুর সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় জলির।
শ্বশুরের শেষ উইল অনুযায়ী সমস্ত সম্পত্তির উপর নিজের মালিকানা দাবি করেন জলি। কিন্তু এই নিয়ে প্রবাসে বসবাসকারী দেবর মোজো টমাসের সঙ্গে ঝামেলা চরমে পৌঁছয়। এমন পরিস্থিতিতে মোজো পরিবারের ঘটে যাওয়া পর পর রহস্যমৃত্যুর নতুন করে তদন্ত করার অনুরোধ নিয়ে পুলিশের অপরাধ দমন শাখায় আবেদন করেন। এরপরই সমস্ত ঘটনা সামনে আসে।
আবারও মৃতদেহের ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু খেয়েছিলেন। প্রত্যেকের শরীরে সায়ানাইডের অস্তিত্ব মেলে। সায়ানাইড খাইয়ে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে তাদের খুন করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে পুলিশের গোয়েন্দ বিভাগ।
প্রতিটি খুনের সময় জলি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকবারই দফায় দফায় জলি ও শাজুকে জেরা করা হলেও কখনোও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে এবার ধরা পড়লেন শাজু ও জলি। তাদের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি ঘটনার সময় জলি ও শাজু ফোনে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও উঠে আসে তদন্তে। এর পরই জলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয় শাজুকেও।
জলিকে সায়ানাইড পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে এমএস ম্যাথু এবং প্রাজিকুমার নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ম্যাথু এবং প্রাজিকুমার একটি গয়নার দোকানের কর্মী। দীর্ঘ দিন ধরে জলিকে চেনেন তারা। তবে সম্পত্তির লোভেই জলি সকলকে খুন করেছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয় পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।