জুমবাংলা ডেস্ক: ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে/কিছু সময় আরো তুমি থাকো আমার পাশে।’ জনপ্রিয় এ গানে যে হাতপাখার কথা বলা হয়েছে, তা মূলত তালগাছের পাতা থেকে তৈরি হয়। এই তালগাছ রোপণে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি মূলত একজন বর্গা চাষি। ১৫ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে তালবীজ কিনে নানা স্থানে সড়কের পাশে ও সরকারি পতিত জমিতে রোপণ করে চলেছেন। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে তিনি নিজ অর্থ ব্যয় করে তালবীজ সংগ্রহ করে তা নিজ হাতে ও শ্রমিক দিয়ে রোপণ করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার তালবীজ রোপণ করেছেন বলে তিনি জানান। প্রায় ৪০টি সড়কে তার রোপণ করা তালগাছ এখন দৃশ্যমান। সম্প্রতি তার জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অনেকে আসছেন তার তালগাছ দেখতে।
৬০ বছরের চিত্তরঞ্জন দাস যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী (দক্ষিণ) গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তালগাছ রোপণের গুরুত্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, তালগাছের কোনো কিছুই ফেলনা না। পাকা তাল, চোখ তাল, তালের আঁটির শাঁস, তালের রস-গুড় গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় খাবার। তা ছাড়া তাল পাতার পাখা, পাতা ও ডাটা জ্বালানি হিসেবে বেশ গুরুত্ব বহন করে। সর্বোপরি বাড়িঘর বানানোর কাজে তাল কাঠের জুড়ি নেই। তার দৃষ্টিতে উঁচু তালগাছ না থাকায় বাবুই পাখিরা আর বাসা বাঁধে না। এসব দিক বিবেচনায় তিনি তালগাছ বিস্তারের সংকল্প করেন। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তালবীজ রোপণ করে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
চিত্তরঞ্জন দাস জানান, এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০টি সড়কে ৫৫ হাজারের মতো তালের বীজ রোপণ করেছেন। তার রোপণ করা গাছে দু-এক বছর পরেই ফল ধরবে।
উপজেলার ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে দেখা যায়, তার লাগানো সারি সারি তালগাছ মাথা উঁচু করে শোভা বর্ধন করছে। এ ছাড়া, বুইকারা, সরখোলার, সড়াডাঙ্গা, ভবদহের চোমরডাঙ্গাসহ এলাকার প্রায় ৪০টি সড়কে রয়েছে তার রোপণ করা তালগাছ। অনেক স্থানে অসাধু লোকজন তার তালচারা কেটে ফেলে ক্ষতি করেছে।
চিত্তরঞ্জন দাস আরো জানান, বিভিন্ন কারণে অনেক গাছ বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়। তালপাখা বানানোর জন্য এক শ্রেণির অসাধু লোক পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি এক দিন থাকব না, কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে। এ বছরও তিনি কয়েক হাজার তালের বীজ কিনেছেন। প্রতিদিন তিনি বীজগুলো বিভিন্ন স্থানে রোপণ করে চলেছেন।
ধোপাদী গ্রামের আয়ুব খান জানান, আমরা বিলে কাজ করতে যাই। পরিশ্রম হলে তার রোপণ করা তালগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিই। ধোপাপাড়া গ্রামের হরে কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, চিত্ত দাসের লাগানো সারি সারি তালগাছ দেখে আমার খুব ভালো লাগে। তাকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন, এরই মধ্যে চিত্তরঞ্জন দাসের রোপণ করা গাছ পরিদর্শন করেছি। দেশের জন্য তিনি এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি চিত্তরঞ্জন দাসকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়নে সাধারণ মানুষেরও সহযোগিতার জন্য আহ্বান করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।