জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাকালীন দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস খনি এলাকার অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ থাকার পর প্রধান ফটক খুলে বের হয়ে এসেছেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ৬০৪ জন শ্রমিক।
রোববার রাত সোয়া ৮টায় খনি থেকে একযোগে বের হয়ে আসেন তারা। ফলে একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে খনির কয়লা উৎপাদন।
এ কথা নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মোখলেসুর রহমান।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রধান ফটক উন্মুক্তকরণসহ তিন দফা দাবিতে তিন দিন ধরে খনির প্রধান ফটকের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন করোনায় লকডাউনে থাকা শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে খনির গেটে অবস্থান নেয় বাইরে থাকা শ্রমিকরাও।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রোববার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা করেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদসহ কর্মকর্তারা।
কিন্তু খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করা এবং শ্রমিকদের বের হওয়ার ব্যাপারে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রধান ফটকের বাইরেও শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বাধ্য হয়েই রাত সোয়া ৮টায় খনির প্রধান ফটকের পকেট গেট খুলে দেয়া হয়।
ফলে খনিতে কর্মরত ৬০৪ জন শ্রমিকের সবাই বের হয়ে আসেন। সব শ্রমিকরা খনি থেকে বের হয়ে আসায় বন্ধ হয়ে যায় খনির কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম।
শ্রমিকদের বের হয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে সেখানে অবস্থানরত পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মোখলেসুর রহমান জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গেট খুলে দিতে বলেন। ফলে শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী মধ্যপাড়া পাথর খনিসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানের গেট উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজকর্ম চলছে। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা দীর্ঘদিন থেকে ভেতরে বন্দি অবস্থায় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় খনির প্রধান গেট উন্মুক্ত করা এবং সব শ্রমিককে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করে স্ব-স্ব কাজে যোগদানসহ ৩ দফা দাবি জানানো হয়। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়ায় বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা রোববার রাত সোয়া ৮টায় খনি থেকে বের হয়ে এসেছেন।
অবশ্য রোববার বিকালে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছিল। আলোচনা শেষে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও বাহিরের শ্রমিকদের ভিতরে প্রবেশ এবং বেতন-ভাতার বিষয়ে চীনা ঠিকাদারকে কর্মপরিকল্পনা করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই খনি এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনিতে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।