আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত শান্তি চুক্তি না করা পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না সৌদি আরব। এ মুহূর্তে ইরসাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আমিরাতকে অনুসরণ করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে রিয়াদ।
গেল সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একমত হয় আমিরাত। এরপরই সৌদি আরবসহ অন্য আরব রাষ্ট্রগুলো আমিরাতকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে বলে খবর চাউর হয়।
আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সৌদি আরবের উপর চাপ বাড়ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনও চাপ দিচ্ছিল আমিরাতকে অনুসরণের জন্য। সবগুঞ্জন আর চাপ উড়িয়ে দিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের আগে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বুধবার বার্লিন সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রিয়াদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কের পূর্বশত হলো-আন্তর্জাতিক শর্তাবলীর ভিত্তিতে অবশ্যই ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি পৌঁছাতে হবে। এ বিষয়ে সৌদি আরব ২০০২ সালে রূপরেখা ঘোষণা করেছে। সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অবশ্যই সম্ভব।
ট্রাম্প চেয়েছেন আমিরাতকে অনুসরণ করুক সৌদি আরব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন, গেলো সপ্তাহে ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আমিরাত যে চুক্তি করেছে তাতে অংশ নেবে সৌদি আরব।
বুধবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের মতো চুক্তিতে অংশ নিক, তিনি তা চান কী না? জবাবে ট্রাম্প জানান, তিনি এটা প্রত্যাশ্যা করেছেন।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবে না তেল আবিব। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে প্রধান হুমকি মনে করে ইসরাইল, আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তির মাধ্যমে তেহরানের আঞ্চলিক প্রভাব দমন করতে চায় তারা।
‘ক্ষতিকারক’
প্রিন্স ফয়সাল বলেন, ২০০২ সালের আবর পিস ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন হলে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একমত হতে পারে সৌদি আরব।
ইসরাইলের একতরফা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠানীতি এবং পশ্চিমতীরে বসতি প্রতিষ্ঠার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। ইসরাইলের এসব পদক্ষেপকে অবৈধ এবং দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষতিকর বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। এসময় আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি নিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
’ফিলিস্তিনের মাটিতে ভিনদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রুখতে যে কোনো পরিকল্পনাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বলেন ফয়সাল।
ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি সৌদি আরব। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ২০০২ সালে আরব রাষ্ট্রগুলো একটি প্রস্তাব দেয়। যেখানে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরবদের থেকে দখল করে নেয়া ভূমি ফেরত দেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি
সংবাদ সম্মেলনের আগে আমিরাত-ইসরাইল চুক্তিকে ভালো চুক্তি বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। বলেন, এমন অনেক রাষ্ট্র আছে যারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। যা আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না। তবে এসময় সৌদি আরবের নাম ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাম তিনি উল্লেখ করেননি।
ট্রাম্প বলেছেন, লোকহেড মার্কিন করপোরেশনের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চায় আমিরাত। যুদ্ধে এ বিমানটি ব্যবহার করেছে ইসরাইল।
তাদের অর্থ আছে। তারা কিছু সংখ্যক এফ-৩৫ অর্ডার করতে চায়। সম্ভাব্য বেচাকেনার বিষয়টি পর্যালোচনাধীন। বলেন ট্রাম্প।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক সক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায় তেল আবিব। মঙ্গলবার তিনি বলেন, সংযুক্ত আমিরাতের কাছে মার্কিন এফ-৩৫ বিক্রির বিষয়ে আপত্তি জানাবে ইসরাইল।
আমিরাত যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫ কিনতে পারে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সামরিক আধিপত্য কিছুটা হলেও কমবে। গেলো সপ্তাহে আমিরাত-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তিতে একমত হয়।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বেচাকেনার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। চুক্তি এবং হস্তান্তরে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। সামনে মার্কিন নির্বাচন। নতুন প্রশাসন এলে হস্তান্তরের সময় বাড়তে পারে। চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে প্রশাসনের। এছাড়া এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদ নিতে হয়।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আমিরাতের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করছেন ট্রাম্পের জামাতা এবং হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরাইলকে, আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে ওয়াশিংটন অস্ত্র বিক্রি করলেও তাদের দেয়া অস্ত্র থেকে আরো আধুনিক অস্ত্র পাবে তেল আবিব।
অস্বাভাবিক কল্পনা
কুশনার জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে লাভবান হবে সৌদি আরব। এখন তাদের লক্ষ্য সৌদি আরব বলেও জানান তিনি।
সোমবার নেতানিয়াহু জানান, সৌদি আরবের উপর দিয়ে আমিরাতে বিমান চলাচল শুরু করতে রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করছে তেল আবিব।
আরব বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ সৌদি আরব। মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান মক্কা মদীনা দেশটিতে অবস্থিত। এ কারণে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়ে আমিরাতের চেয়ে বেশি হিসেবে-নিকাশ করতে হয় সৌদি আরবকে।
ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে শুধু ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয়; মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বও হারাবে সৌদি আরব। ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া দ্বিতীয় আরব দেশ হতে যাচ্ছে সৌদি আরব-এটা অস্বাভাবিক চিন্তা। বলেন, ইসরাইল ইস্যুতে সৌদি আরবের নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এসেক্স ইউনিভার্সিটির লেকচারার আজিজ আলঘাশিয়ান।
তিনি বলেন, ইসরাইল-সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক বাধার চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো মুসলিম বিশ্ব। আরব পিস ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান চায় রিয়াদ। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব চাইলে সৌদি আরবের কাছে আর কোনো পথ নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।