ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রীতে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্রের ঘটনায় অভিযোগ সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনকে তার পছন্দ মত যেকোনো হলে আবাসিকতার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর প্রেক্ষিতে আজ নিজের পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠলেন ফুলপরী।
গত বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ভুক্তভোগী ফুলপরির পছন্দসই হলে আবাসিকতা দেয়ার নির্দেশ দেন।
শনিবার (০৪ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ফুলপরীকে শেখ হাসিনা হল থেকে স্থানান্তরিত করে তার পছন্দ মত বঙ্গমাতা হলের বকুল ব্লকের ৫০১ রুমে তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মোঃ রাশিদুজ্জ্বামান।
এর আগে আজ সকালে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে এসেছেন ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন। প্রথমে পাবনা পুলিশ ফুলপরীকে তার বাসা থেকে পাবনা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। পরে শিলাহদহ ঘাট থেকে সহকারী প্রক্টর শাহবুব আলম, ইবি থানার পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে আসার পর ফুলপরীকে পুলিশি নিরাপত্তায় প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। । তারপর তিনি প্রক্টরের কাছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এসে ফুলপরি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন। আমরা ওই হল কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি, তাকে সেই হলে আবাসিকতা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
এ বিষয়ে ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘ আমি আমার পছন্দমত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে ভালো অনুভব করছি। অন্যায়ের প্রতিবাদে দেশবাসী আমার পাশে দাড়িয়েছে তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমি পড়াশুনা করে, দেশের উন্নয়ন করবো। আমার সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে তা যেন আর কারও সাথে না ঘটে এ বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.মিয়া মোঃ রাশিদুজ্জামান বলেন, ‘ আমি ফুলপরীর হল আবাসিকতার আবেদন পত্র ও হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়েছি। ফুলপরী যেহেতু আমাদের এই হল পছন্দ করেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা তাকে তার পছন্দসই রুমে আবাসিকতা প্রদান করেছি।
এদিকে ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্রের ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিস্কারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার এবং ৭দিনের মধ্যে কেনো তাদের স্থায়ী বহিস্কার করা হবেনা সেই মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (০৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সভাকক্ষে উপাচার্যের সভাপতিত্বে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ড. আমানুর আমান।
শৃঙ্খলা মিটিং শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিটিংয়ে প্রত্যেক সদস্যের মতানুসারে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নবীন এক ছাত্রীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।