ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের দ্বারা শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর নামে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রাতেই থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাতেই অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম ঝন্টু ওরফে জাহাঙ্গীর হোসেন। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক থেকে শেখপাড়া ও শান্তিডাঙ্গা এলাকায় মাইকিং করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রশাসন একটা লিখিত আদেশ দিয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আজ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূনরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। সেইসাথে বিশবিদ্যালয় অধ্যায়নরত সকল ছাত্র ছাত্রীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র বহন করতে বলা হলো। এ নির্দেশ অমানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি দাবি ছিলো বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই দাবি ও কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, বহিরাগতদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও মাদকাসক্তদের আড্ডাখানায় যাতে পরিণত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে এ জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে আকাশ নামে বহিরাগত এক স্থানীয় তরুণ ক্যাম্পাসের লেকে প্রবেশ করেন এবং গোপনে সেখানে অবস্থানকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে ভিডিও ডিলেট করতে বলেন। এক পর্যায়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হলে আকাশ হুমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনার পরে ওই শিক্ষার্থী প্বার্শবর্তী শেখপাড়া বাজারে মোটরসাইকেলে তেল আনতে গেলে এলোপাতাড়ি তাদের মারধর করেন আকাশ সহ কয়েকজন বহিরাগত।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জিশাদ ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্ত মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে। মারধরের শিকার হওয়া আহত দুইজনকে চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুপাশে আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন করেন সাধারন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঝিনাইদহ- কুষ্টিয়া হাইওয়ের ঝিনাইদহের মদনদাডঙ্গা ও কুষ্টিয়ার মধুপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেইসাথে প্রশাসনের বৈঠকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, সাধারন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা চেয়ে তিন দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এসয় তারা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ভাঙচুর করতে থাকে। পরবর্তীতে উপাচার্য ও পুলিশ, আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ৮/১০ থেকে ডেকে নিয়ে তার বাসভবনে আলোচনায় বসেন।
এসময় উপাচার্য তাদেরকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ চারটি গেটে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত আনসার মোতায়ন ও অতিদ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে পুলিশ কর্মকর্তা ও উপাচার্যের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। এবং দাবী না মানা ও তিন দিনের মধ্যে আসামী গ্রেফতার না হলে পূনরায় আন্দোলনের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।