ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হতে পারবেন না—এমন বিধান স্পষ্ট করে নতুন পরিপত্র জারি করেছে ইসি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থী একসঙ্গে তিনটির অধিক নির্বাচনি এলাকায় মনোনয়ন দাখিল করতে পারবেন না। কেউ এই সীমা অতিক্রম করলে তার দাখিল করা সব মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের স্বাক্ষরে জারি করা এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১৩ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হলে তার সবগুলো মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্র বা সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলে সেটিকে ‘লাভজনক পদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ফলে এ ধরনের পদে থাকা ব্যক্তিরা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত কিংবা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত দপ্তর, প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে বিধি অনুযায়ী আগে পদত্যাগ করতে হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে পরিপত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে।
ইসির এই নির্দেশনার ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও শৃঙ্খলা আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও পরিপত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর ৪৪খ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নির্বাচনি এজেন্টকে (বা এজেন্ট না থাকলে প্রার্থীকে নিজে) তফসিলি ব্যাংকে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যয় ব্যতীত নির্বাচন সংক্রান্ত সব ব্যয় এই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিশোধ করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ফরম-২০-এ নির্বাচনি ব্যয়ের সম্ভাব্য উেসর বিবরণী এবং ফরম-২১-এ প্রার্থীর সম্পদ, দায়-দেনা ও বাত্সরিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী দাখিল করাও বাধ্যতামূলক।
নির্বাচনি কর্মকর্তার কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে প্রার্থীদের :ইসির পরিপত্রে জানানো হয়েছে, ‘নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী কর্তৃক সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে।’ পরিপত্রে বলা হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর নির্বাচনি এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মহানগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনি এলাকায় জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারির পর রিটার্নিং অফিসার দ্রুত আসনভিত্তিক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। এতে কমিশন ঘোষিত সময়সূচি উল্লেখ থাকবে এবং রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ, সময় ও স্থান জানাতে হবে। সরকারি ছুটিসহ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। প্রার্থী, প্রস্তাবক ও সমর্থনকারীকে সরাসরি উপস্থিতিতেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার বাধ্যতামূলক :নির্বাচনে বাধ্যতামূলকভাবে ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকাই ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টেরা ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করে মুদ্রণপূর্বক ব্যবহার করবেন।
সংসদীয় আসনের সংশোধিত সীমানা প্রকাশ :ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘পূর্বে প্রকাশিত সীমানা পুনঃনির্ধারণের প্রজ্ঞাপন আংশিক সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে বাগেরহাট জেলায় একটি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং গাজীপুর জেলা থেকে একটি আসন কমানো হয়েছে। সংশোধনের পর মোট ৩০০ আসনের সীমানার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হলো।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



