জুমবাংলা ডেস্ক: দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিতে ভরপুর। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই কম-বেশি কাঁঠাল জন্মায়। তবে গাজীপুর জুড়ে কাঁঠালের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে।
জেলার কাপাসিয়া উপজেলা কাঁঠাল উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। প্রতিবছর এই ফলের মৌসুম শুরু হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে কাপাসিয়া থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সকাল-সন্ধ্যা কাঁঠাল বেচাকেনা চলে। এ সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত থাকে উপজেলার কাঁঠালের বাজারগুলো।
উপজেলার কাপাসিয়া বাজার, রানীগঞ্জ, রাউনাট, ঘাটকুড়ি, চাঁদপুর, আমরাইদ, দরদরিয়া, টোক, বীর উজুলী, আড়াল, ঘাগটিয়া, চালার বাজার থেকে পাইকাররা সরাসরি কাঁঠাল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। ট্রাক-পিকআপ ও নদী পথে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয় ফলটিকে। ঢাকা-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে খেয়াঘাটে কাপাসিয়া বাজার উপজেলায় কাঁঠালের সবচেয়ে বড় বাজার। সপ্তাহে দুই দিন এখানে কাঁঠালের হাট বসে।
কাঁঠালে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে, আর কোনো ফলে তা নেই। পাকা কাঁঠাল ফল হিসেবে বেশ উপাদেয়। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। ফলটির কোনো অংশই ফেলনা নয়। এই ফলের বিচি তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার। ফলটির খোসা গবাদি পশু গরুর প্রিয় একটি খাবার।
কাপাসিয়া বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কাঁঠাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বাজারজুড়ে কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে। কাঁঠাল পরিবহনের জন্য চারপাশে কাঁঠালভর্তি ভ্যান, ঠেলা গাড়ি, ছোট-বড় পিকআপ রাখা। এখানে কাঁঠাল কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে কয়েক শ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
কাঁঠাল চাষি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমার ৩০টি কাঁঠালগাছ রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কাঁঠালের ফলন বেশি হয়েছে। এখন কাঁঠালের দাম ভালো পাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতেও এ রকম দাম পেলে এ বছর কাঁঠাল বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হবে।’
কাপাসিয়া বাজার থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাঁঠাল কিনে কুমিল্লা-নোয়াখালী এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন মো. কাজিম উদ্দিন আকন্দ। তিনি বলেন, ‘৫৫ থেকে ৯৫ টাকা দরে কাঁঠাল কিনেছি কৃষক ও ছোট পাইকারদের কাছ থেকে। পাঁচ টাকা করে বাজারের ইজারা ও তিন টাকা করে ট্রাকে বোঝাইয়ে খরচ হয়। সঙ্গে রয়েছে ট্রাক ভাড়া। জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ট্রাক ভাড়া প্রায় ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। তবু কাঁঠাল বিক্রি করে ভালো ব্যবসার আশা করছি।’
কাপাসিয়া থেকে কাঁঠাল কিনে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করেন মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘২০ থেকে ৬০ টাকা দরে কাঁঠাল কিনেছি। কাপাসিয়ার কাঁঠালের চাহিদা অনেক। নদীপথে ট্রলারে করে কাঁঠাল নিয়ে যাওয়া হবে নারায়ণগঞ্জে। ট্রলারে তুলতে শ্রমিককে প্রতিটি কাঁঠালের জন্য পাঁচ টাকা দিতে হবে। পাঁচ টাকা দিতে হয় বাজারের ইজারাদারকে। এ বছর কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। কাঁঠালগুলো দেখতে সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু।’
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ। তিনি একটি বিশেষ কাজে কাপাসিয়া এসেছিলেন। কাপাসিয়া বাজারে কাঁঠাল দেখে বাসার জন্য চারটি কাঁঠাল কেনেন তিনি।
আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে কাপাসিয়ার কাঁঠাল বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে খেয়েছি। কাপাসিয়ার কাঁঠাল খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই এই বাজার থেকে একটি পাকা ও তিনটি কাঁচা কাঁঠাল কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।’
কাপাসিয়া বাজারের ইজারাদার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘কাপাসিয়ার কাঁঠালের দেশজুড়ে অনেক সুখ্যাতি রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বেশির ভাগ পাইকার সরাসরি এলাকার বাগান থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান।’
কাপাসিয়া উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান খান বলেন, ‘কাপাসিয়ার কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু। এ বছর ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এই ফলটির সমস্যা হচ্ছে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া। কাঁঠাল পাকা শুরু হলে একসঙ্গে অনেক কাঁঠাল পেকে যায়। তাই প্রক্রিয়াজাত করে মজুত করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পরবর্তী সময় বিক্রি ও ব্যবহার করা যায়।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel