জুমবাংলা ডেস্ক : এলাকার একবন্ধুর এপার্টমেন্টে গিয়েছিলাম সেদিন। বড়লোকদের বসবাস সে-বাড়িতে। সবাই গাড়ি-বাড়ির মালিক। কাজ শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। একজন ভদ্রমহিলা বললেন, বাবা, তুমি ইমাম সাহেবের ছেলে না? আমি বললাম, জি আন্টি।
উনি বললেন, আমার নাতিকে একটু আরবী পড়াতে পারবা? মুআজ্জিন সাহেবকে পাঁচশো দিতাম। তোমাকে একহাজার করে দেবো প্রতিমাসে।
এ কথা বলে তিনি এমন ভাব ধরলেন, যে টাকার অংকটা খুব বেশি বলে ফেলেছেন। রাজি না হয়ে আমার উপায় নেই! উনাকে সাফ জানিয়ে দিলাম, জি না আন্টি। আমি ঢাকা থাকি। আর সাভারে থাকলেও পড়াতাম না। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরআন শেখানো আমার পছন্দ না।
মহিলা মন খারাপ করে চলে গেলেন।
ভদ্রমহিলাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমারও মন খারাপ হলো। শুধু এই মহিলাকে নয়, এভাবে অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ টিউশনি বিষয়টা আমার ভালো লাগে না। কুরআন শরিফ পড়িয়ে টাকা নেওয়া একপ্রকার দান গ্রহণের মত মনে হয় আমার কাছে।
প্রশ্ন করতে পারেন, কেন?
উত্তরে বলবো, ভদ্রমহিলা উনার নাতিকে অবশ্যই ইংরেজি পড়ান। এবং এর জন্য আলাদা টিচার রেখেছেন। সেই টিচার সপ্তাহে তিন-চারদিন ক্লাস করান। কারণ ইংরেজি টিচারের সময়ের মূল্য আছে। তিনি ইম্পর্টেন্ট মানুষ। তিনি যদি কয়েকদিন না-ও আসেন, তাকে কখনো ফোন করে বলা হবে না, “স্যার আজ চারদিন হলো আপনি আসেন না, কারণ কী”।
কিন্তু সেই ছেলের আরবী শিক্ষক যদি ভুলক্রমে একদিন না আসেন, তাহলে পরের দিন ভদ্রমহিলা বাঁকা বাঁকা কথা বলবেন। এটাই আজকালের পরিস্থিতি। আর এ রকম যদি তিনচার দিন হয়ে যায়, তখন তো হুজুরকে বেতনের খোটাও শুনতে হতে পারে।
আরও একটা বিষয় হলো, ইংরেজি টিচারের বেতন বা সম্মানি কমপক্ষে পাঁচ হাজার। তাহলে আরবী শিক্ষকের বেতন এক হাজার হয় কোন কারণে? এটাও শিক্ষা, ওটাও শিক্ষা। সস্থানে দোনো শিক্ষারই রয়েছে বিশেষ মর্যযাদা। তাহলে আরবী কুরআনের শিক্ষকের বেলায় এতো অবহেলা কেন? আমার বুঝে আসে না।
মানুষের সম্মান প্রকাশের নানান বিষয়ের মধ্যে বেতনও একটা মাধ্যম। যার বেতন যতো বেশি সে তত বেশি সম্মানিত। অনেক সময় মানুষ কী কাজ করে এটা ধরা হয় না, তার ইনকাম কতো সেটা জিজ্ঞেস করা হয়। আর সে অনুযায়ী তাকে সম্মান দেওয়া হয়। সব ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য না হলেও বেশিরভাগ জায়গায় এটাই মূখ্য হয়ে থাকে।
আর আধুনিক যুগের বাচ্চারা তো আরবী শিক্ষককে শিক্ষকই মনে করেন না। বাড়ির দারোয়ান বা এ জাতীয় মানুষের কাতারে ফেলেন। এর পেছনে একটি কারণ দাঁড় করিয়ে বলবো, ইংরেজি টিচার যেই হোম ওয়ার্কগুলো দিয়ে যান, বাচ্চাটা সেগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, আর আরবী শিক্ষক যেই পড়া পড়তে বলে যান, বাচ্চাটা সেটাকে কোন চোখে দেখে।
আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের গুরুত্ব শেষ করে ফেলেছি। এখন পাবলিক আমাদেরকে কমদামী বা অমূল্য জ্ঞান মনে করে। টাকা কম দিলো না বেশি দিলো সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে- এই টাকার মাধ্যমে আপনি কতটা ইম্পর্টেন্ট সেটা বুঝা যায়। লেখক- সুফিয়ান ফারাবী, সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।