এনাম আবেদীন: বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার সময় কাটছে আত্মীয়-স্বজন ও লন্ডনে নাতনিদের সঙ্গে কথা বলে। দিনে কিছু সময়ের জন্য অবশ্য তিনি পত্র-পত্রিকা পড়েন এবং টিভি দেখেও সময় কাটান। তবে কৌশলগত কারণে রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে সরে এসেছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, কিছুদিন আগে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎ, পরে দলটির স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং পৃথকভাবে আরো দুই নেতার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ভালোভাবে নেয়নি। অনেকে ওই সব ঘটনা রাজনৈতিক তৎপরতার অংশ বলে মনে করেছেন। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কিছুটা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির অনেক নেতা আগ্রহী হলেও খালেদা জিয়া আর কাউকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। তবে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং ডা. মামুন দু-এক দিন পর পর ফিরোজায় গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
কারামুক্তির শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পাশাপাশি ‘তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না’ এমন আভাসও সরকারের মন্ত্রীরা দিয়েছেন। ফলে ভেতরে ভেতরে বিএনপির মধ্যেও আলোচনা হলো আপাতত রাজনীতি করার দরকার নেই, খালেদা জিয়ার জীবন বাঁচুক।
সরকারের নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ায় গত ২৫ মার্চ থেকে কারামুক্ত হয়ে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন খালেদা জিয়া। ওই দিন থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রথমে দুই সপ্তাই কোয়ারেন্টিনে এবং এর পর থেকে জনসমাগম এড়াতে এক ধরনের আইসোলেশনে আছেন তিনি। দিনের খাওয়াদাওয়া, গোসল এবং নামাজের মতো রুটিন কাজ বাদ দিলে তাঁর সবচেয়ে ভালো সময় কাটে প্রতিদিন বিকেল বা সন্ধ্যায়। কারণ ওই সময় তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে ফিরোজায় যান বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। মাঝেমধ্যে যান ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী অরনী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার ও ভাগ্নে শাহরিয়া হক।
ফিরোজা সূত্রের খবর, এ স্বজনরা প্রায় প্রতিদিনই গিয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তাঁর কারামুক্তির পেছনে পর্দার আড়ালে এ আত্মীয়-স্বজনের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে সমঝোতার পর শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
ঢাকার এ আত্মীয়দের সঙ্গ ছাড়াও খালেদা জিয়ার নিয়মিত আরেক রুটিন হচ্ছে রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সঙ্গে কথা বলা। লন্ডন সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পৃথক দুটি স্থানে কথা বলতে খালেদা জিয়ার বেশ সময় লেগে যায়। দক্ষিণ লন্ডনের উপকণ্ঠে টেমস নদীর ধারে ওয়ালটন এলাকায় তারেক ও প্রয়াত কোকোর পরিবার বসবাস করে। ওই দুটি বাসার দূরত্ব ‘ওয়াকিং ডিসট্যান্স’ বলে লন্ডনে বসবাসরত এক সাংবাদিক সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। তারেক ও পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা ছাড়াও তিনি কথা বলেন নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের সঙ্গে। পাশাপাশি কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি ও তাঁর দুই কন্যা জাফিয়া রহমান ও জায়মা রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন খালেদা জিয়া। শহীদ মইনুল রোডের যে বাসা খালেদা জিয়াকে ছাড়তে হয়েছে, সেখানে তাঁর সঙ্গে দুই ছেলের পরিবারও থাকত।
তাঁদের পারিবারিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, অনেক সময় লন্ডনে কথা বলতে বলতে বেশ দেরি হয়ে যায়। তা ছাড়া বেশ আগে থেকেই দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস খালেদা জিয়ার পরিবারের। আর সেই অভ্যাস এখনো কিছুটা থেকে যাওয়ায় একটু দেরিতে ঘুমাতে যান খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ফজরের নামাজ পড়ে তিনি আবারও ঘুমাতে যাওয়ায় উঠতে দেরি হয়ে যায়। ফলে দিনের কাজও শুরু হয় একটু দেরিতে।
ফিরোজায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যাডাম নাশতা খেয়ে পেপার পড়তে যান। এরপর তাঁর প্রেসার ও ডায়াবেটিস চেক করেন সেবিকা সাকিলা বেগম। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তিনি গোসলে যান। তবে গোসল তিনি নিজে করতে পারেন না।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।