জুমবাংলা ডেস্ক: উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রায় এক খালে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ মাছ চাষ করায় আমন চাষাবাদ নিয়ে দুচিন্তায় রয়েছে এখানকার কৃষকরা।
উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের আমতলা খাল ও মহারাজপুর ইউনিয়নের শাকবাড়িয়া খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। খাল দুটির অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ দেওয়ায় খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। মাছ চাষের কারণে শুকনো মৌসুমে খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারে না স্থানীয় কৃষক। আর বৃষ্টি হলেই খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে খালপাড়ের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়ে। খালের বিভিন্ন স্থানে নেট-পাটা দিয়ে আটকে মাছ চাষ করায় ৮টি মৌজার প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমির পানি সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে ওই এলাকার জমিতে পানি জমে থাকায় বীজতলা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
মহারাজপুর ইউনিয়নের কালনা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই বিলে পানি জমে জমির বীজতলা তলিয়ে যায়। সেই পানি সরাতে দীর্ঘ সময় লাগে। সময়মতো পানি সরাতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আমন উৎপাদন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এক সময়ের প্রবাহমান আমতলা ও শাকবাড়িয়া খালে এভাবে বাঁধ দেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে লোনা পানি তোলায় মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করতে পারেন না কেউ। খাল দুটি দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ সচল করতে কৃষি অফিসে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। আমতলা খালপাড়ের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ম-ল বলেন, খালটি মাছ চাষের জন্য বাঁধ দিয়ে দশ খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে। খালের গোড়ার দিকে গিলাবাড়ী গ্রামের পাশের দুই খণ্ডে শাহজান গাজী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দখল করেন। মাঝের তিন খণ্ড উমর শিকারি এবং পরের খণ্ডগুলো আশরাফুল গাজীর দখলে রয়েছে। তারা এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এলাকা। এ ব্যাপারে শাহজান গাজী বলেন, খালটি ইজারা নিয়ে এর অর্ধেক অংশে আমরা নিজেরা মাছ চাষ করছি। বাকি অর্ধেক অংশের টাকা স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরের উন্নয়ন কাজের জন্য দেওয়া হয়। দেখা গেছে, আমতলা খাল গিলাবাড়ী গ্রাম থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মহেশ্বরীপুরের নয়ানি স্লুইস গেটে গিয়ে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। খালের দুই স্থানে আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দিয়ে তার নিচে ছোট পাইপ বসানো হয়েছে। এছাড়া ৮টি স্থানে নেট-পাটা বসিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে বিলের অতিরিক্ত পানি সরাতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। একই অবস্থা দেখা গেছে শাকবাড়িয়া খালে। ওই খালটি দিয়ে কয়রা সদর ইউনিয়নের একটিসহ মহারাজপুর ইউনিয়নের ৪টি মৌজার পানি সরানো হয়ে থাকে। খালটির একদিকে হোগলা স্লুইস গেট, আরেক দিকে কাশিয়াবাদ স্লুইস গেট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। খালটির মধ্যবর্তী স্থানে অন্তাবুনিয়া এলাকায় বালু ভরাট করে একবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুই পাড়ের লোকজনের দখলের অনেক স্থানে সরু হয়ে গেছে। খালের বড় অংশে নেট-পাটা বসিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। এতে এলাকার পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ওই খালটি এক ব্যক্তি দখল করে খণ্ড খণ্ড করে মাছ চাষ করছেন। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার অসীম কুমার দাশ বলেন, বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা আমাকে জানিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মমিনুর রহমান বলেন, ওই খাল দুটি ইজারা দেওয়া হয়েছে কি না এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে মাছ চাষের জন্য খালের পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। দ্রুত খালের নেট-পাটা অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।