নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সদর উপজেলায় চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের কাছ থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় তৃণমূল শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা জয়দেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে অভিযুক্ত শ্রমিক নেতারা বলছেন জোরপূর্বক কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।
শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভবানীপুরের বেগমপুর গ্রামে অবস্থিত পলমল সাফা সোয়েটারস লিমিটেড-২ কারখানায় কয়েকশ’ শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তারা গত ১২ অক্টোবর পূজার ছুটির দাবিতে প্রথমে কর্মবিরতি করেন এবং পরে ভবানীপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০০ শ্রমিককে শ্রম আইন অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করে এবং তাদের সকল পাওনাদি পরিশোধের অঙ্গীকার করে।
এরপর গত ১৪ অক্টোবর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা বকেয়া টাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হলে শামীম খান ও ফাতেমা আক্তার নামে দু’জন ব্যক্তি নিজেদেরকে বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন।
এরপর এই অর্থ প্রাপ্তির পেছনে তাদের ভূমিকা রয়েছে দাবি করে শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থের একটি বড় অংশ দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক ৭ হাজার টাকা করে আদায় করেন। এভাবে তারা মোট ১৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং ভবিষ্যতে কোনো কারখানায় চাকরি করতে না দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় সুমনসহ অন্যান্য শ্রমিকরা নিরাপত্তার জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে অভিযুক্ত দু’জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযুক্ত জাতীয় তৃণমূল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শ্রমিকরা আন্দোলন করায় ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন অনুযায়ী তাদেরকে চাকরি হতে অব্যহতি দেয়। পরে ওই শ্রমিকরা আমার অফিসে আসেন। গতকাল তাদের পাওনাদি পরিশোধের সময় নির্ধারণ করা হয়। তারা যেনো নায্য পাওনা বুঝে পান এবং বহিরাগতরা এসে ঝামেলা করতে না পারে এজন্য ঘটনাস্থলে ছিলাম। ওই সময়ে ৭০ থেকে ৮০ জনকে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা খুশি হয়ে আমাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে দেন। এই টাকা নেওয়া দোষের কিছু না, এটি আমাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্রে রয়েছে। তারা থানায় যে অভিযোগ করেছে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছি এটা অসত্য।’
শ্রমিকনেতা ও অভ্যুত্থানকারী ছাত্র শ্রমিক জনতার সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, ‘পূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে পলমল গ্রুপ-এর সাফা সোয়েটারে শ্রমিক ছাটাইয়ের ঘটনা ও তৃণমূল শ্রমিক ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা শ্রমিকদের পাওনা টাকা নিয়ে যে প্রতারণা করেছে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। মোট ১৬০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এক বেসিক কেটে রেখে দিয়েছে এবং পূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে মালিক পক্ষের এই অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাই। মজুরি ও মর্যাদা নিয়ে টালবাহানা চলবে না। পোশাক খাতে অসন্তোষ টিকিয়ে রেখে শ্রমিককে দোষী বানানো চলবে না।’
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।