জুমবাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অবস্থিত বটগাছের মতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির পুত্র এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র।
আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি’র ওপর একটি স্মারক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমি এইমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার বটগাছটি পরিদর্শন করেছি, যেটি আমার বাবা ১৯৭২ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
৫০ বছর ধরে গাছটি যেমন বেড়ে উঠেছে তেমনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কও বেড়ে চলছে। ’
‘আমার বাবা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে সে সময় গাছটি রোপণ করেছিলেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ওই জায়গায় থাকা বটগাছটি ১৯৭১ সালে উড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ সেখানে শিক্ষার্থীরা একত্র হতো এবং আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করত। বাবা গাছটি রোপণ করেছিলেন, যাতে শিক্ষার্থীরা আবার সেখানে জড়ো হয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করতে পারে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবা আমাদের বড় হওয়ার সময় এই মহান জাতির গল্প বলেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ বাঙালির কথা, নিজ বাচ্চার মৃতদেহ কোলে রাখা মায়েদের কথা, ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাজার হাজার শিক্ষক ও ছাত্রকে এলোপাতাড়ি গুলি করার কথা বলেছিলেন। ’
কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৭২-এর ১৪ ফেব্রুয়ারিতে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন তখন এখানকার শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ’
‘সারা জীবন আমার বাবা বিশ্বের মানুষের কল্যাণের জন্য লড়াই করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের ওপর সরকারের সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বাবা। সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণের নিবন্ধন ও ভোট দেওয়া সহজ করার চেষ্টা করেছিলেন। একটি দলে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার বিষয়ে তিনি সচেতন ছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির যে আশঙ্কা রয়েছে সে জন্য কাজ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধেও তিনি কাজ করেছিলেন এবং অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। ’
বক্তব্য শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো মজবুত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এই আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারকে ১৯৭১-এ এডওয়ার্ড কেনেডির করা ‘Crisis In South Asia’ শিরোনামের প্রতিবেদনের মূল কপি উপহার দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জনগণ, কনস্যুলেট ও সিনেটটররা সে সময় পাকিস্তানিদের সাহায্য করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের বিরোধিতা করেছিল। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডিও তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি নিক্সন প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ’
এর আগে সকালে কেনেডি জুনিয়রসহ পরিবারের সদস্যরা রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বটতলা এলাকা পরিদর্শন করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।