জুমবাংলা ডেস্ক : ‘পাসপোর্ট ছাড়াই তিন দেশ ভ্রমণ’- কথাটি শুনতে একটু অবাস্তব মনে হলেও একটু ভাবুন তো…! পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই একসঙ্গে তিন দেশের সৌন্দর্যকে একটি মাত্র ট্রাইপয়েন্ট থেকে উপভোগ করা যায়, তাহলে কেমন হতো? তাও আবার বাংলাদেশে থেকে!
একটু কল্পনা করুন এমন একটি জায়গা, যেখানে একই সঙ্গে আপনি তিনটি দেশের অংশ দেখতে পারেন, কেমনই–বা লাগবে এ রকম একটি জায়গার স্বাদ নিতে? আপনার সে কল্পনা কিংবা স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য বাংলাদেশেই রয়েছে এমন একটি স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ স্থান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ট্রাইপয়েন্ট হয়ে উঠেছে।
হ্যাঁ, বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখেই দেখা মিলছে একসঙ্গে তিন দেশের অপার সৌন্দর্য (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল)। এ যেন চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্যময় লীলাভূমি স্বপ্নের এক শহর।
তিন দেশের সৌন্দর্যের মধ্যে রয়েছে, “বাংলাদেশ ভারতকে ভাগ করা মহানন্দা নদী, তার একটু উপরে আকাশে তাকালে দেখা মিলছে ভারতের দার্জিলিং পাহাড় ও মেঘমুক্ত আকাশে শীত মৌসুমে উঁকি দেওয়া বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ” আর এই তিন সৌন্দর্যকে সব থেকে ভালো ভাবে উপভোগ করা যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার থেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শীত মৌসুমের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন তেঁতুলিয়া উপজেলায়। আর এই মৌসুমে তাদের বেশি আকৃষ্ট করে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। কারণ এসময়ে মেঘমুক্ত শুভ্র আকাশে পরিষ্কারভাবে উঁকি দিয়ে থাকে এই পর্বতটি। তবে এর মাঝে সন্ধ্যার আকাশের সঙ্গে বসে একসঙ্গে তিন দেশের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পর্যটকরা বেশি ছুটছে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারের ওয়াকওয়েতে।
এদিকে বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা চা বাগান দেখতেও অনেকে ছুটছে পর্যটন নগরী খ্যাত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা না গোটা তেঁতুলিয়াই পর্যটন উপজেলা। এদিকে তেঁতুলিয়ার পাশাপাশি পুরো জেলায় ভিন্ন ভিন্ন পর্যটন ব্যবস্থা থাকায় আবার পুরো জেলাকেই পর্যটন নগর বলা হচ্ছে। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সবুজ ও সমতল চা বাগানের পাশাপাশি তিন দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে একমাত্র স্থান হয়ে উঠেছে তেঁতুলিয়া।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর শীত মৌসুমে ভিন্ন ভাগে রূপ নেয় তেঁতুলিয়া। সমতলের চা, মহানন্দা নদী, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টের পাশাপাশি এ উপজেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ তিন দেশের সৌন্দর্যকে খুব ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই তেঁতুলিয়া শীত মৌসুমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তবে এটি এমন একটি পয়েন্ট যেখানে বসে আপনি এক পলকে তিন দেশের তিনটি সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন পয়েন্ট রয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, তেঁতুলিয়ায় ভ্রমণ যাত্রার প্রথম স্থান হিসেবে সবার আগে ডাকবাংলোর মহানন্দা নদীর পাড়ের নাম আসে। যেখান থেকে সরাসরি খালি চোখে একসঙ্গে তিনটি দেশের সৌন্দর্যলীলা উপভোগ করা যায়। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা একটু বেশি থাকে। কারণ শীতের সময় খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এই উপজেলাকে সাজাতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যে ভাবে যাবেন-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আসতে পারেন। এছাড়া ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে আসতে পারবেন। এর পর সেখান থেকে পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা বাস টার্মিনালে গিয়ে তেঁতুলিয়ার বাস ধরে সরাসরি তেঁতুলিয়া পৌঁছাতে পারেন। আর রাত থাকার জন্য জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হোটেল-মোটেল রয়েছে। তবে অবশ্যই হোটেলে থাকতে আগেই যোগাযোগ করে নিতে হবে। নয়তো রাত যাপনের একটু সমস্যা হতে পারে।
আর কাঞ্চনজঙ্ঘার উদ্দেশে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এলে নভেম্বরের শুরু থেকে ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আসতে হয়। আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে আপনার ভাগ্যে জুটবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।