জুমবাংলা ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্প নামে খুলনায় প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০১৯ সালে চালু এ প্রকল্প চলবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। এই উদ্যোগের পথিকৃৎ হিসেবে বাস্তবায়নে থাকছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। সহযোগিতায় থাকছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ চলছে। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি খুলনায় ওপেন জিম উদ্বোধন করা হয়েছে।
কেসিসি ইতিমধ্যেই সোনাডাঙ্গা সোলার এনার্জি পার্কের ভেতরে খোলা ব্যায়ামাগারের জন্য জমি প্রস্তুত করে কংক্রিট ঢালাই দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কেসিসির অনুরোধ পেয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খোলা ব্যায়ামাগারের সরঞ্জাম সংগ্রহ করে সেখানে কংক্রিট ঢালাইয়ের ওপরে ওপেন ব্যায়ামাগার স্থাপন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই খোলা ব্যায়ামাগারের মাধ্যমে খুলনা শহরের জন্য একটি আদর্শ মডেল তৈরি করতে চায়। যা অন্যান্য শহরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। ওপেন জিমের উদ্বোধনের মাধ্যমে খুলনার সাধারণ মানুষ নিয়মিত বিনা খরচে শারীরিক চর্চা করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর শহর হিসেবে খুলনাকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
জিমটি উদ্বোধন উপলক্ষে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এটি কেসিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অধিদফতর (এনসিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. ফারজানা আক্তার ডরিন বলেন, নগর উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে উদ্যোগগুলোর সমন্বয় সাধন এবং এই প্রক্রিয়াতে জনগণের অংশগ্রহণ উপহার দিতে স্বাস্থ্যকর শহর প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সুইস ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন একটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার মূল লক্ষ্য সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক সুশাসনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহর-অঞ্চলে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। এই প্রকল্প প্রাথমিকভাবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিশ্বের পাঁচটি শহর খুলনা (বাংলাদেশ), বোগোটা (কলম্বিয়া), ডুয়ালা (ক্যামেরুন), মেক্সিকো ও তিউনিসে (তিউনিসিয়া) বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা হতে যাচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বে ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর শহরের রোল মডেল।
খুলনা স্বাস্থ্য দফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, খুলনা মহানগরীর দ্রুত নগরায়নের ফলে অসংক্রামক রোগ, স্থুলতা, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবহুল এই শহরে খোলামেলা স্থান ও পার্কের অপ্রতুলতা শারীরিক কার্যক্রম, বিনোদন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্প সুস্থ নগর জীবনযাপন ও শারীরিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, শারীরিক কার্যক্রম মানসিক স্বাস্থ্য, জ্ঞানগত দক্ষতা ও সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কেও জোরদার করে। খোলামেলা স্থানে বিনামূল্যে ব্যায়ামাগার স্থাপন করা হচ্ছে যাতে সামাজিক যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ে।
ডব্লিউএইচওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বারদান জং রানা বলেন, উন্মুক্ত জিম- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন উন্নয়নের জন্য আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি এর একটি চমৎকার উদাহরণ। আশা করি এই প্রকল্প বাংলাদেশের অন্যান্য শহরকে অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সবিজুর রহমান বলেন, নতুন উন্মুক্ত জিম সব বয়সী মানুষের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। ডব্লিউএইচও খুলনাকে স্বাস্থ্যকর ও আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কেসিসি ও এনসিডিসির সঙ্গে কাজ করছে। উন্মুক্ত জিম এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সিটি মেয়র বলেন, আমরা খুলনাকে একটি স্বাস্থ্যকর শহর বানাতে উচ্ছ্বসিত। এই উন্মুক্ত জিম আমাদের শহরের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন এবং আমি আশা করি এটি মানুষকে আরও বেশি সক্রিয় হতে উৎসাহিত করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।