জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর নিজস্ব মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রাজনৈতিক পক্ষপাত করেছে।
এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালে ওই দুটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সরেজমিন অনুসন্ধানের ভিত্তিতে। বাংলাদেশে পাঠানো ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) কারিগরি মূল্যায়ন মিশন (টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন বা টিএএম) মার্কিন সময় গতকাল শনিবার তাদের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষেবা এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বার বার অসমভাবে নির্বাচনী বিধি প্রয়োগ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত বা ব্যহত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সন্তোষজনক ছিল না। আর এসব কারণেই নির্বাচনকালীন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পর্কে রাজনৈতিক পক্ষপাতের ধারণা তৈরি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বড় বড় সংবাদপত্রগুলো ক্ষমতাসীন সরকার, রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু মাত্রায় সমালোচনা করতে পেরেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নির্বাচনটিকে ‘প্রহসন’ এবং ‘সাজানো’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ‘মৃত্যুশয্যায়’ এবং এর ‘অবক্ষয় ঘটছে’ বলা হয়, এর পাশাপাশি নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং নির্বাচনে জালিয়াতি হতে পারে এমনটা ধারণা করা হয়।
শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমগুলোর মালিকানার ওপরেও তথ্যের সত্যতার মাত্রা অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ১৯টি সংবাদমাধ্যমের মালিক এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তাদের ১১ জন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের নয়জন আওয়ামী লীগের এবং দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্যে এসব সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পক্ষপাত থাকতে পারে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রভাবে সরকারের সমালোচনায় কিছুটা ভাটা পড়ে থাকতে পারে, বলা হয় প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের দিন সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ১৮টি ঘটনার কথা জানা গেছে। তাদের থেকে নোট কেড়ে নেওয়া হয়, ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করা হয়। এমনকি এসব ঘটনা পুলিশের সামনেই ঘটেছে এবং তারা নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও জানা যায়।
এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য মূল্যবান পথরেখা হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডল জুড়ে নির্বাচনী রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলির সংস্কার করার দরকার।’
আইআরআই’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।’
বাংলাদেশে অবস্থানকালে টিএএম-এর স্বীকৃত পাঁচজন দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষক নির্বাচন ও সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এই মিশনটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে যা এনডিআই এবং আইআরআই ৮ থেকে ১১ অক্টোবর, ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালনা করেছিল। পিইএএম-এর পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়নের কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
আইআরআই এবং এনডিআই হল নির্দলীয়, বেসরকারী সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করে। ইনস্টিটিউটগুলো গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
নির্বাচন নিয়ে এনডিআই’র রিপোর্টে কিছু যায় আসে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।