জুমবাংলা ডেস্ক : বাঙালি জাতির হাজার বছরের দাসত্বের মুক্তি ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে মহানায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। এই পথে ছিল কখনো তুমুল স্লোগানমুখর জনতা, আবার কখনো ছিল জেলখানার তীব্র নিঃসঙ্গতা। উত্তাল সাগরের মতো অস্থির জীবনজুড়ে ছিল উত্থান-পতনের ঝাপটা। সময়ের আবর্তে কখনো কখনো দূরে চলে গেছে কাছের মানুষেরা। কিন্তু এই দুর্মর পথে তাকে নিঃস্বার্থভাবে সঙ্গ দিয়েছেন এক মহীয়সী নারী, তার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা (রেণু), আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী ছিলেন তিনি। দুঃসময়ে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন পুরো পরিবারকে। একজন গৃহিণী হয়েও বাংলাদেশের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে রেখেছেন বড় ভূমিকা। এমনকি বিভিন্ন সময় বিচক্ষণতার সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিষয়েও। সর্বোপরি একজন বাঙালি গৃহিণী থেকে ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
এই দেশের স্বাধীনতার পেছনে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ত্যাগ ও ভূমিকা অনবদ্য। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি না নেওয়া। পাকিস্তানি জান্তা এবং তাদের এদেশীয় এজেন্টরা চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে গোল টেবিল বৈঠকে বসাতে। মূলত বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য জনতার অগ্নিমুখর সংগ্রামে পানি ঢাকার ষড়যন্ত্র ছিল এটা। ঠিক এমন একটা সময়েই একটি সুদূরপ্রসারী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি না নিতে পরামর্শ দেন। এরপরই প্যারোলে বের না হওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু। আর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠে বাঙালি জনতা। ঠিক এই সিদ্ধান্তের কারণেই ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। আর জেল থেকে বের হওয়ার পরই জাতীয় নির্বাচন চেয়ে দেশজুড়ে জনমত সৃষ্টি করেন বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাস্তবে আন্দোলন, সংগ্রাম, জনগণ, দেশ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাবনার জগতে আর কিছু ছিল না। এমন যোগ্য সহধর্মিণী পেয়েছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু অখণ্ড মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন দেশ ও জাতির জন্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনকে নির্বিঘ্ন করার জন্য সংসারের হাল নিজেই ধরেছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা। পৈতৃক সূত্রে যা সম্পদ পেয়েছিলেন, তার সবই তিনি ব্যয় করেছেন সংসারের পেছনে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ জেল জীবনেও সন্তানদের পরম মমতায় আগলে রেখেছেন, বুঝতে দেননি কাউকে আর্থিক অনটনের কথা। সর্বোপরি এভাবেই একজীবনের প্রতিটি দিনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা হয়ে ওঠেন বঙ্গমাতা।
বঙ্গবন্ধু ও ফজিলাতুন্নেছা: জেলগেটে অর্ধেক সংসার
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। ব্রিটিশ আমলে স্কুলজীবন থেকে শুরু হয়েছে তারা কারাবরণ। এসময় বঙ্গবন্ধু ৭ দিন কারা ভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারা ভোগ করেছেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে বন্দি হিসেবে নেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এই সময়টায় ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রহরায় গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। শুধু মুক্তিযুদ্ধের এই বন্দি সময় বাদে, বঙ্গবন্ধু জীবনে যতোবার জেলে গেছেন, সেখানেই নিয়মিত হাজির হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা। নিয়মিত জেলগেটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। তার কাছ থেকে আন্দোলন সংগ্রামের নির্দেশনা এনে দিতেন নেতাকর্মীদের। সংসারের গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক দায়িত্বও নিয়মিত পালন করতেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা।
কারাগারে সাক্ষাতের অনুভূতির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় একজন আইবি কর্মচারী বসে থাকত, আর জেলের পক্ষ থেকেও একজন ডিপুটি জেলার উপস্থিত থাকতেন। …. স্ত্রীর সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে কিন্তু বলার উপায় নেই। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো স্ত্রীকে নিষেধ করে দেই যাতে না আসে। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত আমার স্ত্রীকে নিষেধ করে দিয়েছিলাম ঢাকায় আসতে, কারণ ও তখন তার দুইটা ছেলেমেয়ে নিয়ে দেশের বাড়ি থাকত।’
‘কারাগারের রোজনামচা’য় স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বঙ্গবন্ধু। পরিবারের বিরহে কাতর হয়ে তিনি লিখেছেন: ২ বৎসরের ছেলেটা এসে বলে, ‘আব্বা বালি চলো। কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললামা, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।‘ ও কি বুঝতে চায়!… দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনও বুঝতে শিখে নাই। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।…
তিনি আরো লিখেছেন: জেল গেটে যখন উপস্থিত হলাম ছোট ছেলেটা আজ আর বাইরে এসে দাঁড়াইয়া নাই দেখে একটু আশ্চর্যই হলাম। আমি যখন রুমের ভেতর যেয়ে ওকে কোলে নিলাম, আমার গলা ধরে ‘আব্বা আব্বা’ করে কয়েকবার ডাক দিয়ে ওর মার কোলে যেয়ে আব্বা-আব্বা করে ডাকতে শুরু করল। ওর মাকে আব্বা বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপার কি? ওর মা বলল- বাড়িতে আব্বা আব্বা করে কাঁদে, তাই ওকে বলেছি আমাকে আব্বা বলে ডাকতে। রাসেল আব্বা আব্বা ডাকতে লাগল। যেই আমি জবাব দেই সেই ওর মার গলা ধরে বলে, তুমি আমার আব্বা। আমার উপর অভিমান করেছে বলে মনে হয়। এখন আর বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে যেতে চায় না।
মুজিব ও রেণু: রাজনীতি ও প্রেমের যুগলবন্দি
নিজের পরিবারের অর্থকষ্টের কথাও ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর লেখায়। জীবনসঙ্গী বেগম ফজিলাতুন্নেছা (রেণু) মুজিবের আত্মত্যাগের কথা বলতেও বঙ্গবন্ধু ভোলেননি। এ ব্যাপারে তিনি লিখেছেন: কোম্পানি আজও আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেয় নাই, তাই একটু অসুবিধা হতে চলেছে বলে রেণু বলল। ডিসেম্বর মাসে আছি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি- চার মাস হয়ে গেল, আজও টাকা দিলো না! আমি বললাম, জেল থেকে টেলিগ্রাম করব। প্রথম যদি না দেয়, তবে অন্য পন্থা অবলম্বন করব। আমার টাকা তাদের দিতেই হবে। কোনোমতে চালাইয়া নিয়ে যাও, বাড়ির থেকে চাউল আসবে, নিজের বাড়ি, ব্যাঙ্কেও কিছু টাকা আছে, বছর খানেক ভালভাবেই চলবে, তারপর দেখা যাবে। আমার যথেষ্ট বন্ধু আছে, যারা কিছু টাকা ধার দিতে কৃপণতা করবে না। ‘যদি বেশি অসুবিধা হয়, নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছােট বাড়ি একটা ভাড়া করে নিব’, রেণু বলল। সরকার যদি ব্যবসা করতে না দেয় তবে বাড়িতে যে সম্পত্তি আমি পেয়েছি আব্বার, মায়ের ও রেণুর তাতে আমার সংসার ভালভাবে চলে যাবে। রেণু বলল, ‘চিন্তা তােমার করতে হবে না।’ সত্যই আমি কোনােদিন চিন্তা বাইরেও করতাম না, সংসারের ধার আমি খুব কমই ধারি।
বন্দিরা সপ্তাহে একটি চিঠি আর ১৫ দিনে একবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারত। কিন্তু সেখানেও বাধা-নিষেধ ছিল। গোয়েন্দা দফতরের কর্মচারীদের পড়ার পর চিঠি হাতে পাওয়া যেত, সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দা ও জেলের কর্মচারীরা উপস্থিত থাকত। বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে লিখেছেন : ‘নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছ হয়, কিন্তু উপায় কী? আমরা তো পশ্চিমা সভ্যতায় মানুষ হই নাই। তারা তো চুমুটাকে দোষণীয় মনে করে না। স্ত্রীর সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে কিন্তু বলার উপায় নাই।
বেগম মুজিব থেকে বঙ্গমাতা
বঙ্গবন্ধু তার কারাগারের রোজনামচা বইয়ের অগণিত স্থানে সহধর্মিণীর প্রতি গভীর ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস ও পরম নির্ভরতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বেগম মুজিবের ধৈৰ্য্য, ত্যাগ ও অবদানের বিবরণ দিয়েছেন। প্রায় ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনে বেগম মুজিব ভালোবেসে তার স্বামীর সংগ্রামমুখর, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনে সঙ্গী ছিলেন। তবে বেগম মুজিব সবসময় তার স্বামীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। শুধু পারিবারিক জীবন নয়; বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে ঝুঁকি ও সংকটকালীন মুহূর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেগম মুজিব নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছেন। বেগম মুজিবের রাজনেতিক পরামর্শ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছেন এমন দৃষ্টান্ত কম নয়।
বঙ্গবন্ধু প্রায়ই মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হতেন। তাই ব্যথা হলেই ব্যথানাশক স্যারিডন সেবন করতেন। বেশি ব্যথা করলে ২-৩টা একসঙ্গে খেয়ে নিতেন। বেগম মুজিব ব্যথানাশক ওষুধ খেতে নিষেধ করতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু খুব একটা আমল দিতেন না। কারাগারে তীব্র মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার প্রিয় সহধর্মিণীর কথা মনে পড়েছে। লিখেছেন: রেণু স্যারিডন খেতে দিতে চাইত না। ভীষণ আপত্তি করত। বলত, হার্ট দুর্বল হয়ে যাবে। আমি বলতাম আমার হার্ট নাই। অনেক পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে। বাইরে তার কথা শুনি নাই, কিন্তু জেলের ভিতর তার নিষেধ না শুনে পারলাম না।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুর স্কুল জীবনেই জীবনসাথী হলেও সংসার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর এন্ট্রান্স পাস করার পর। শেখ মুজিবুর রহমান তখন কলকাতায় পড়তেন। রাজনীতি করতেন। মাঝেমধ্যে আসতেন টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের বড় মেয়ে শেখ হাসিনার জন্ম হয়। তখন শেখ মুজিবের বয়স ২৭। বেগম মুজিবের বয়স ১৭ বা ১৮। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করতেন, জেলেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়, ছেলেমেয়ে-সংসার সামলাতেন বেগম মুজিব। এককথায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেনতিনি।
উত্তরাধিকার সূত্রে বেগম মুজিব যতটুকু অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন, তার পুরোটাই তিনি ব্যয় করেছেন নিঃস্বার্থভাবে সংসার এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত রাজনীতির পিছনে। কিছু কিছু টাকা জমিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেওয়া হতো, সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু ভবন খ্যাত ৩২ নম্বরের বাড়িটির কাজ সম্পন্ন করেন।
বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি জীবনযাপন করছিলেন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বঙ্গমাতার ফজিলাতুন্নেছার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। এমনকি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রতি মাসে কোথায় কাকে কতো টাকা পৌঁছে দিতে হবে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুসারে সেই কর্তব্যও নিপুণভাবে পালন করেন বঙ্গমাতা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দায়ের করা আগরতলা মামলা চলেছিল ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ক্যান্টনমেন্টে আট মাসের বেশি বন্দি জীবনে এসময় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অন্তত ৩০-৩৫ বার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ১৯৬৯ সালের শুরুতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ঐতিহাসিক ১১ দফার ভিত্তিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার প্রস্তুতি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ-নির্দেশনা সংগ্রহ করায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা অনন্য। এমনকি শেষ পর্যন্ত জান্তাদের প্রস্তাব মেনে প্যারোলে মুক্তি না নিতেও জোর গলায় পরামর্শ দেন তিনি বঙ্গবন্ধুকে। ফলে গণআন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য জান্তাদের ষড়যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। তিনি হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু, বাঙালির একমাত্র মুখপাত্র।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও বঙ্গমাতার সঠিক পরামর্শ ছিল। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, মন থেকে যা বলতে ইচ্ছে করে, তাই বলা উচিত। বঙ্গবন্ধু সেটি করেছিলেন। বাকিটা ইতিহাস।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা যেমন আলোকবর্তিতা, তেমনি আমাদের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান অনন্য অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর মতো বঙ্গমাতার নামও চিরস্মরণীয়।-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।