জুমবাংলা ডেস্ক : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক নারীকে (৩৬) সমস্ত শরীর বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে একদল যুবক। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর।
এ ঘটনায় জড়িত বখাটেদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের ৫টি ইউনিট। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নির্দেশে মাঠে কাজ করছে এসব টিম। ইতোমধ্য এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত দুইজন হলেন, জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুর রহিম ও রহমতউল্লাহ।
রবিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবদুর রহিম (২৪) নামের এক যুবককে আটক করেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একলাশপুর থেকে আবদুর রহিমকে আটক করা হয়। তিনি জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে। তিনি স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারের লোকজন। তার স্বজনদের কাছ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, গত তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে তার ঘরে প্রবেশ করেন। বিষয়টি দেখতে পান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার।
গতকাল রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন এবং পর পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করা হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে এক যুবক নারীর পরনে থাকা জামা কাপড় টেনে-হিঁচড়ে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে। এ সময় ওই নারী বিছানার ছাদর, তোষক, খাটের ওপর থাকা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে নিজের দেহ ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু নির্যাতনকারীদের মধ্যে কয়েকজন চারদিক থেকে কাপড়গুলো টেনে সরিয়ে দেয়। এক যুবক নারীর মুখে বারবার লাথি মারে। একজন তার মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয়। এক যুবক নারীর গোপনাঙ্গে বারবার হাত দেয় ও আঘাত করে। আরেক যুবক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও রক্ষা পাননি ওই নারী।
ভিডিওটি দেখে একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল, কালাম, সাইফুদ্দিন, রহিম ও সুমনসহ ৬-৭ ওই নারীর ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখে পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম নামের নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। এ নেক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।