রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়াটাই যেন অপরাধ হয়েছে বলে মনে করছেন ১২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারী। জীবিত উদ্ধার সুমন বেপারীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলা নানান সমালোচনায় বিপাকে পড়েছে তার পরিবার।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার পাড়ে দিনভর অপেক্ষার পরও যখন সুমনকে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তারা একরকম লাশের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার দয়ায় তাকে জীবিত ফেরত পেয়েছেন। এতে তাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই। তবে তার বেঁচে ফেরা নিয়ে নানান সমালোচনায় মানসিকভাবে কষ্টে আছেন সুমনসহ তার পরিবার।
২৯ জুন সোমবার রাতে জীবিত উদ্ধারের পর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার রাতেই মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামে ফিরে যান সুমন বেপারী। তাকে ফিরে পেয়ে বৃদ্ধ মা আমেনা বেগমসহ পরিবারের অন্যদের মাঝে যখন খুশির জোয়ার তখন বিভিন্ন সমালোচনা আর হাজারো প্রশ্নে বিব্রত তারা।
স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন সুমন বেপারীর ভাই শাহজাহান বেপারী। তিনি বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমার ভাই আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে ফিরেছে। আমাদের পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। তবে ভাইয়ের এই বেঁচে ফেরা নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছে। আমাদের পরিবারকে নিয়েও নানা বাজে মন্তব্য করছে। তাহেলে কি আমার ভাই সুমনের বেঁচে ফেরাটা অন্যায় হয়েছে? বেঁচে ফেরাটা কি তার অপরাধ হয়েছে?
সোমবার বুড়িগঙ্গায় ময়ূর লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া মর্নিংবার্ড লঞ্চটি থেকে ৩৪ জনের মরহেদ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে নারী-শিশু ও পুরুষ ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে সুমন বেপারীর স্বজনরা সদরঘাটে ছুটে আসেন। তবে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি এবং মরদেহগুলোর মধ্যে তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তারা সুমনকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু রাতে হঠাৎ করে তিনি জীবিত উদ্ধার হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
সুমনের ভাই বলেন, লঞ্চডুবির খবর পেয়ে সোমবারই আমরা ঘটনাস্থলে চলে যাই। সারাদিন খুঁজেও সুমনের সন্ধান পাইনি। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এদিন আমাদের এলাকার আরো তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। ভেবেছিলাম ভাইয়ের লাশটি কবর দেয়ারও হয়ত সুযোগ হবে না। কিন্তু সব আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি বাঁচিয়েছেন। বিষয়টি অন্যভাবে দেখার কী আছে বুঝলাম না! যে যাই বলুক আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি। সবার কাছে দোয়া চাই।
সুমনের পরিবারের ভাষ্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মকতারা জানিয়েছেন লঞ্চটি উল্টে যাওয়ায় লঞ্চের এয়ারপকেটে থাকা বাতাসে সুমন অবশ্যই বেঁচে থাকতে পারে। বাল্কহেড ডুবির ৩০ ঘণ্টা পর নদী থেকে জীবিত উদ্ধার করার নজিরও রয়েছে। সুমনের বেলায়ও এমনটি হতে পারে। তারপরও কেন এমন সমালোচনা?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুমনের উদ্ধার হওয়া নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য মনোক্ষুণ্ন করছে সুমন বেপারীর পরিবারের সদস্যদের। সুমনের মা আমেনা বেগমও ছেলেকে নিয়ে সমালোচনায় ক্ষুদ্ধ। তবে তার স্বস্তি আদরের ধনকে কাছে ফিরে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সকালে খবর পাইলাম লঞ্চ ডুইবা গেছে। সারাদিন কানলাম-কাটলাম। মনে করছি আমার পোলা মইরাই গেছে। রাইতে খবর পাইলাম সুমনরে টিভিতে দেখাইতাছে। আমার পোলা আল্লাহ ফিরাই দিছে, সব আল্লাহর ইচ্ছা।’
সমালোচনার বিষয়ে সুমন বেপারী বলেন, ‘আমি এসব জানি না। হাসপাতালেও অনেক প্রশ্ন করেছে। সাংবাদিক ভাইদের বারবার আমি সবকিছু বলেছি। যে যা বলুক আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আমার মাকে, আমার পরিবারের সবাইকে আবার দেখতে পেয়েছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।