জুমবাংলা ডেস্ক : নেত্রকোনার বারহাট্টায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের একটি ‘গ্রেট বিম’ রবিবার রাতে ভেঙে পড়েছে। তদারকির ঘাটতি, অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং রডের যথাযথ বাঁধাই না হওয়ায় মসজিদটি নির্মাণের মাঝপথে এ ঘটনা ঘটল বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সরকার ২০১৮ সালে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বলা হয়, এসব মসজিদ হবে ইসলামিক সংস্কৃতিকেন্দ্র।
এতে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামী গবেষণা ও দাওয়াত কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশু শিক্ষার ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু।
উপজেলা পর্যায়ের তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। বারহাট্টা-আটপাড়া সড়কের কোর্টভবন এলাকায় বারহাট্টা উপজেলা মডেল মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড এবং মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। বর্তমানে মেসার্স নায়মা এন্টারপ্রাইজকেই সাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই নির্মাণকাজে গাফিলতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঠিকাদার অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। কলাম ও বিমে দশ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্ট অপর্যাপ্ত। সব রড মরিচা ধরা। নির্মাণের পর থেকে কিউরিং চোখে পড়ে নাই। সরকারি প্রকৌশলী মাঝে মাঝে আসলেও ঠিকাদারের লোকজনের সাথে দশ-পনের মিনিট কথা বলে চলে যায়।
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি সোমবার সরেজমিনে মসজিদটি দেখতে গেলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী ও কাজের ঠিকাদারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাজহারুল ইসলাম নির্মাণাধীন মসজিদের তিনতলায় উপস্থিত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. শহীদুর রহমান, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, বারহাট্টা হাফিজিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ারুল হক, রাজনীতিক শামছ উদ্দিন আহমেদ বাবুল, সমাজকর্মী মতিশ চন্দ্র সরকার নান্টু, গণমাধ্যমকর্মী লতিবুর রহমান খানসহ অনেকেই বলেন, রবিবার সন্ধ্যারাতে হঠাৎই বিকট আওয়াজ শুনে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে জানতে পারি, নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের তিনতলায় দক্ষিণ পাশের একটি গ্রেট বিম ভেঙে পড়েছে। আমরা সবাই ঘটনাস্থলে যাই ও আফসোস করি। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা সাইট ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তার কথা উপেক্ষা করে অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। উপস্থিত স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন প্রকল্পের ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। এ সময় স্থানীয়রা ভেঙে পড়া বিমটি না সরানো এবং যেভাবে আছে সেভাবেই রাখার জন্য আনোয়ার হোসেনকে বলেন। কিন্তু সোমবার সকালে গিয়ে ভেঙে পড়া বিমের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন জানায়, ভেঙে পড়া গ্রেট বিমটি গভীর রাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উপস্থিত স্থানীয়দের সবাই বলেন, মডেল মসজিদের সকল কাজে অপর্যাপ্ত রড-সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই বিম ভেঙে পঢ়েছে। কোনো কোনো কলাম কাত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ফাটল ধরেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের প্ল্যান-এস্টিমেট অনুয়ায়ী কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজে ক্রটির ব্যাপারে অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি দুই দিন পরিদর্শনে এসেছি, সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে পাইনি। বিষয়টি ডিসি স্যারকে অবগত করেছি। গ্রেট বিম ভেঙে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছি। স্যার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমান বলেন, পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পড়ায় আমরাই ওই গ্রেট বিমটিকে ভেঙে ফেলতে বলেছি। সূত্র : কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।