জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মোট ৬ জনকে গ্রে ফ তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বুধবার রাতে দুই শিক্ষক ও এক পিয়নকে গ্রে ফ তার করা হয়। তারা হলেন- ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদুর রহমান, সোহেল আল মামুন ও পিয়ন মো. সুজন।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রাসেল এবং ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক জোবায়েরকে গ্রে ফ তার করা হয়।
তাদের গ্রে ফ তারের পর কিভাবে প্রশ্নফাঁস করা হয় তা জানা গেছে।
ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্ন বাছাইয়ের (সর্টিং) সময় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুর রহমানের যোগসাজশে বাংলা ১মপত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভিতর বাংলা ২য়পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য়পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খামে ঢুকিয়ে নেন এবং প্যাকেট সিলগলা করে তার ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।
বাংলা ১মপত্রের পরীক্ষার দিন যথানিয়মে থানা থেকে বাংলা ১মপত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য়পত্রের খামটি কৌশলে সরিয়ে ফেলেন। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তারা দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি।
পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে (চুক্তিতে সব সেট) ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া উত্তরপত্রের সঙ্গে পরের দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
পরে সামাজিক মাধ্যমে এসব উত্তরপত্র ছড়িয়ে পড়ায় তা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ছুটোছুটি করেন। প্রতিটি উত্তরপত্রের কপি ২শ হতে ৫শ টাকায় বিক্রি হয় গোপনে।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হলে তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। পরে ইংরেজি ২য়পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি ২য়পত্র পরীক্ষা দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র পায়। যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখনো হয়নি।
উল্লেখ্য, পুলিশ জানতে পারে একইভাবে ইংরেজি ১মপত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে এই প্রশ্নগুলো ঢুকানো ছিল। আর এ প্রশ্নগুলো প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে নিশ্চিত হয়ে তারা অভিযান চালায়। পরে বিকালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় আনলেও রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক করা হয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করে এবং বুধবার ভোরে হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। মামলার অপর আসামি ক্লার্ক আবু হানিফ পালিয়ে যায়।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় মামলা করার এবং প্রশ্ন ফাঁস হওয়া ৪টি পরীক্ষা স্থগিত করার।
পরে দিনাজপুর বোর্ডের চেয়ারম্যান দিনাজপুরে ফিরে গিয়ে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণিত, পদার্থ, রসায়ন এবং কৃষি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।