আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউ ইয়র্কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ’র মৃতদেহ। ফাহিমের বোন একদিন ধরে ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে অ্যাপার্টমেন্টে আসেন স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টার দিকে। তখুনি খণ্ডিত ফাহিমকে আবিস্কার করেন তিনি। পুলিশ তার ফোন পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হয়। নিউ ইয়র্কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ’র মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে ম্যানহাটনের লোয়ারসাইডের একটি বিলাসবহুল কনডোমিনিয়াম ভবনের অ্যাপার্টমেন্টে ফাহিমের বিকৃত খন্ডিত মৃতদেহ পায় পুলিশ।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুজন গোয়েন্দা ঘটনাস্থলে হাজির হলে ফাহিমের মৃতদেহের পাশে একটি বৈদ্যুতিক করাত খুঁজে পান। পুলিশের আরেকজন মুখপাত্র জানান, পরে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের মাথা ও শরীরের অন্যান্য অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টে বেশ কয়েকটি বড় প্লাস্টিক ব্যাগও পাওয়া যায়। খুনের আলামত নিশ্চিহ্ন করার জন্য খুনি এই প্লাস্টিক ব্যাগগুলো সঙ্গে করে এনেছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ফাহিমের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি, পরে কয়েকজন বন্ধু নাম গোপন রাখার শর্তে নিশ্চিত করে মৃত ব্যক্তির নাম ফাহিম সালেহ, বয়স ৩৩। সালেহ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত।
পুলিশের একজন কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, ফাহিমের বোন একদিন ধরে ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে অ্যাপার্টমেন্টে আসেন স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টার দিকে। তখুনি খণ্ডিত ফাহিমকে আবিস্কার করেন তিনি। পুলিশ তার ফোন পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
পুলিশ যখন হাজির হয় তখনও ইলেকট্রিক করাতটি বিদ্যুতের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারণা, ঘটনার মাঝপথে ফাহিমের বোন হাজির হয়ে গেলে খুনি খুনের আলামত গোপন করার প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রেখেই অন্য আরেকটি বাহির-পথ দিয়ে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পুলিশ হাতে না পৌঁছালেও, পুলিশ ঘটনাটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে নিয়েই তদন্তকাজ শুরু করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফাহিমের ওই ভবনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার বিকালে ফাহিম এলিভেটর দিয়ে ওই ভবনে ঢুকছেন। তার পেছনেই মাথায় টুপি, মুখে মাস্ক, হাতে গ্লভসসহ স্যুট পরা এক লোক একটি স্যুটকেস নিয়ে ঢুকছে। ক্যামেরায় পরের দিকের ফুটেজে দেখা যায় ফাহিম প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরেই ফাহিমের বোন এসে হাজির হচ্ছে। ওই দালান থেকে সার্ভিস এন্ট্রান্স দিয়ে বেরোনোর দ্বিতীয় আরেকটি পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । তাদের ধারণা খুনি ওই পথেই পালিয়েছে।
বন্ধুদের মতে, ‘ফাহিম একজন উচ্চাবিলাসী তরুণ, সে প্রতিদিন সকালবেলা দৌড়াতে বের হত। সারাদিনে মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতো এবং প্রায়ই ব্যবসার কাজে নাইজেরিয়া যেত। এর বাইরে ফাহিম নিয়মিত নানা ধরনের প্রযুক্তি-গ্যাজেট সংগ্রহ করত। ম্যানহাটানের এ অ্যাপার্টমেন্টে সে একাই থাকত। তার একটা ছোট কুকুর রয়েছে, নাম লায়লা।’ কুকুরটিকে অ্যাপার্টমেন্টে অক্ষত অবস্থায়ই পাওয়া গেছে।
পূর্ব হিউস্টোন স্ট্রিটের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘একজন কম বয়সী মেয়েকে পাগলের মত কান্নাকাটি করতে দেখলাম। আমার ধারণা এই নারীই মৃতদেহটি খুঁজে পেয়েছে।’ ফাহিম গত বছরই সাড়ে ২৫ লাখ ডলার দিয়ে ম্যানহাটনের এই অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছিলেন। ১৯৮৬ সালে তার জন্ম। ফাহিমের ২০১৬ সালের ব্লগ প্রোফাইলে উল্লেখ আছে, তার জন্ম সৌদি আরবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় এসে তারা বসতি করেন নিউ ইয়র্কের রচেস্টারে।
তার বন্ধুদের মতে, ফাহিম তরুণ বয়সেই কোডিংয়ের মাধ্যমে অ্যাপস বানানো শুরু করেন। তার স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা ওয়ালথামের বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে। ওই সময়েই প্র্যাঙ্কডায়াল অ্যাপ তৈরি করে তিনি ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।
নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়ায়ও এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক তিনি। ২০১৮ সালে সালে নাইজেরিয়ায় মোটর সাইকেল রাইড শেয়ারিং ব্যবসার শুরু। গোকাদা তার রাইড শেয়ার অ্যাপের নাম। ২০১৯ সালে এখান থেকে ফাহিম ৫.৩ মিলিয়ন ডলারের পুঁজি সংগ্রহ করে, ওয়েব সাইট টেকক্রাঞ্চ জানাচ্ছে এ তথ্য। নাইজেরিয়ার লাগোসসহ অন্যান্য আফ্রিকান শহরগুলোয় রাইড শেয়ারিং ব্যপক জনপ্রিয়।
এর আগে টেককাঞ্চের কাছে ফাহিম জানিয়েছে, গোকাদার মাধ্যমে লাগোসসহ আফ্রিকায় অন্য শহরেও তার ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। গোদাকাদার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘আমরা গোকাদা ক্লাব স্থাপন করব প্রতিটা শহরে, সেখানে রেস্টুরেন্ট থাকবে, যাতে চালকরা বিশ্রাম নিতে পারে এবং একই সঙ্গে গোকাদা শপ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। ওখান থেকে ড্রাইভাররা তাদের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য সামগ্রী কিনতে পারবে, চাল, শাকসবজি এবং অন্যান্য বাজার-সদাই।’
ফাহিমের মৃতদেহ যে দালানে পাওয়া যায়, সেটা একটা ১০তলা বিল্ডিং। কাঁচ ও ইটের কাঠামোর এই কনডো অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে ইতালিয়ান মার্বেলের রান্নাঘর, মাস্টারবাথ, সাদা ওক কাঠের মেঝে। এ অ্যাপার্টমেন্টের দাম দুই মিলিয়ন থেকে আড়াই মিলিয়ন ডলার বলে রিয়েলস্টেট ওয়েবসাইট জানাচ্ছে।
ফাহিম সালেহের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন তারই সহকর্মী পাঠাওয়ের সিইও হোসেন ইলিয়াস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘ফাহিম বিশ্বাস করত প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান বদলানো সম্ভব। আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিল সে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।