লাইফস্টাইল ডেস্ক: প্রকৃতিতে শীতের ঠান্ডা বাতাসের আমেজ শুরু হয়েছে। শীতের মৌসুমে দিন ছোট। আর রাত দীর্ঘ হয়। ফলে এই সময় সূর্যের আলো খুব কম সময়ের জন্যই পাওয়া যায়। সূর্য থেকেই মেলে শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি। পৃথিবীর প্রায় এক বিলিয়ন লোকের মধ্যে ভিটামিন ডির অভাব লক্ষ্য করা যায়।
দেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিটামিন ‘ডি’ একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড বা স্টেরয়েড হরমোন। এর কাজ হচ্ছে– দেহের অন্ত্র (ইনটেসটাইন) থেকে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। এটি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, নানা মরসুমি সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায় ভিটামিন ডি। শুধু তা-ই নয়, হাড় এবং দাঁত মজবুত রাখতে ভিটামিন ডি-র জুড়ি মেলা ভার।
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ডি এমন একটি পুষ্টিগুণ, যা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পুরোপুরি আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না। গবেষকরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রয়োজনের শতকরা ৩০ ভাগ শুধু তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে। বাকি ৭০ ভাগ তৈরির জন্য আমরা পুরোপুরি সূর্যালোকের ওপর নির্ভরশীল। আর এ কারণেই বেশির ভাগ মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে নানা রোগের শিকার হচ্ছেন।
ভিটামিন ডি হাড়ের ত্বক সংক্রান্ত সংক্রমণ এমনকি, ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতেও উপকারী। শরীরের পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ সব সময়ে পর্যাপ্ত থাকে না। বিভিন্ন কারণে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি তৈরি হয়।
শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সূর্যের আলো প্রয়োজন। কিন্তু রোদে বেশি ক্ষণ থাকলে ত্বকের ক্ষতি হবে ভেবে অনেকেই বাইরে বেরোতে চান না। আবার অনেকেই ভিটামিন ডি তৈরি হবে ভেবে, ঠাঠা রোদে ছাদে গিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু তাতে কি খুব একটা লাভ হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ডি শুধু হাড়ের জন্য জরুরি নয়। রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এমন অনেক প্রোটিন এবং উৎসেচক তৈরিতেও সাহায্য করে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় এবং পেশির ক্ষয়, চুল ঝরে পড়া, হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদদের মতে, দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত যে কোনও সময় গায়ে একটু রোদ লাগালেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি হয়ে যায়। তবে, এই সময় যে হেতু রোদের তেজ বেশি থাকে তাই বেশি ক্ষণ রোদে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কার দেহে কতটা সূর্যালোক শোষিত হবে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির চামড়ার রঙের উপর।
পুষ্টিবিদদের মতে, যাদের ত্বকের রং চাপা, তারা অন্তত পক্ষে আধ ঘণ্টা রোদে থাকুন। যারা তুলনামূলক ভাবে ফর্সা, তাদের ১৫ মিনিটের বেশি সূর্যের আলোতে থাকার প্রয়োজন পড়ে না।
ভিটামিন ডি ত্বকের কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয়। যার অর্থ হলো ভিটামিন ডি পেতে আমাদের শরীরের অনেক বেশি ত্বক সূর্যের আলোতে প্রকাশ করতে হবে। ভিটামিন ডি পেতে বাহু, পা, পিঠ এবং পেট সূর্যের আলোতে প্রকাশ করা উচিত। তবে পিঠে রোদ লাগাতে ভুলবেন না। কারণ পিঠের ত্বক শরীরে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। মেরুদণ্ডের কাছাকাছি অর্থাৎ পিঠে-ঘাড়ে রোদ লাগানো অনেক বেশি কার্যকর বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
আমাদের ত্বকের রঙ নির্ধারণ করা হয় মেলানিন নামক রঞ্জক দ্বারা। হালকা ত্বকের লোকের তুলনায় গাঢ় ত্বকের লোকেরা বেশি মেলানিন পান। মেলানিন এমন সুরক্ষক হিসাবে কাজ করে যা আপনার ত্বককে অতিরিক্ত সূর্যের আলো থেকে বাঁচায়। এটি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন বাধার মতো যা ইউভি রশ্মি শোষণ করে এবং ত্বককে সানবার্ন এবং ত্বকের ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে।
এ ছাড়াও ত্বকে সরাসরি রোদ না লাগিয়ে হালকা বা সাদা রঙের পোশাক পরে রোদে থাকলে ত্বকের ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো যায়।
রোদে থাকতে হচ্ছে ভেবে সানস্ক্রিন মেখে বাইরে গেলে কোনও লাভ হবে না। বরং রোদ লাগানোর পর, ফিরে এসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সানস্ক্রিন মেখে নেওয়া যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায় যে, এসপিএফ ৩০ বা ততোধিকের সাথে সানস্ক্রিন দেহে ভিটামিন ডি উত্পাদন ৯৫-৯৮ শতাংশ হ্রাস করে। সুতরাং, আপনি যদি সানস্ক্রিন পরে থাকেন তবে আপনার ত্বকের পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরি করতে আপনাকে সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হতে পারে।
গবেষকদের মতে, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যামন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সার্ডিন, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি পেতে ডিম, দুধ, কমলার জুস, সোয়ামিল্ক, মাশরুম, লিভার, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, পনির খেতে পারেন।
বেশি সময় রোদে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব
যদিও সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর একটি দুর্দান্ত উৎস, তবুও খুব বেশি রোদ আপনার ত্বকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এখানে খুব বেশি পরিমাণে রৌদ্রের সংস্পর্শে আসার কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
সানবার্নস: এটি খুব বেশি সময় রোদে থাকার সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। রোদে পোড়া লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকে লালভাব, ফোলাভাব, ব্যথা বা ফোস্কা পড়া।
চোখের ক্ষতি: ইউভিবি রশ্মির অত্যধিক এক্সপোজার রেটিনার ক্ষতি করতে পারে, যা ছানি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বয়স্ক ত্বক: রোদে খুব বেশি সময় ব্যয় করলে আপনার ত্বকের দ্রুত বয়স বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু লোকের চুলকানি হয় এবং তাদের ত্বক আলগা এবং চামড়াযুক্ত হয়ে যায়।
হিটস্ট্রোক: হিটস্ট্রোককে সানস্ট্রোকও বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যা খুব বেশি রোদের সংস্পর্শের কারণে শরীরের মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ঘটে।
ত্বকের ক্যানসার: অনেক বেশি ইউভিবি আলো ত্বকের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।