জুমবাংলা ডেস্ক : যতবারই বৃদ্ধাশ্রমের মা বা বাবাদের নিয়ে কোন রিপোর্ট লিখতে যাই ততবারই নচিকেনার সেই গানের পঙ্গিত গানে বেঁজে উঠে। “ছেলে আমার মস্ত মানুষ. ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার মস্ত ফ্ল্যাটে যায়না দেখা এপার ওপার । নানান রকম জিনিস, আর আসবাব দামি দামি সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি । ”
আজ এমনই এক মায়ের গল্প শুনাবো যে মায়ের মৃত্যু দেহ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে দুই ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীরা। বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই এই নারীর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।
সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন আম্বিয়া খাতুন। পাঁচ বছর আগে পড়ে গিয়ে ডান হাত ভাঙে এই বৃদ্ধার। হারিয়ে ফেলেন চলাফেরার শক্তি। হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন। এরপর সন্তানদের কাছে অচ্ছুত হয়ে যান এই মা। এক নাতনী তাকে গোপনে রেখে যান মিরপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে। দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমস্ এর সাংবাদিক সিরাজুম সালেকীনের প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে আসলো।
সেখানেই কোনও ভাবে দিন কাটছিল তার। বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই এই নারীর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের খোঁজ বের করে যোগাযোগ করেন সন্তানদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার বৃদ্ধার এক ছেলেকে তারা জানান মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। নিয়ে ভালো মতো চিকিৎসা করান।
আম্বিয়ার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে নিজেদের বাড়িতে। তারা মাকে নিয়ে যেতে রাজি নন। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে এক ছেলে বলেন, ‘মা, মারা গেলে জানাবেন, লাশ নিয়ে যাবো।’
আর এক পুত্রবধূ গত মঙ্গলবার মিরপুরের পাইকপাড়ার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী মিলটন সমাদ্দারকে ফোন করে বলেন, ‘আবার যদি আমার শাশুড়িকে নিতে ফোন করেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আমার শাশুড়িকে অপহরণের মামলা করবো।’
সংকটাপন্ন আম্বিয়া খাতুনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মিলটন সমাদ্দার। গত পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমটির নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। তবে তার পরিবারের এমন হুমকিতে তিনি এযাবতকালে এমন ঘটনার মুখোমুখি হননি।
মিলটন সমাদ্দার বলেন, ‘ডান হাত ভাঙ্গা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ আম্বিয়াকে ২০১৮ সালে আমাদের এখানে রেখে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারি রেখে যাওয়া নারীরা ছিলেন বৃদ্ধার নাতনী। ছয়মাস পর সন্তানরা মাকে দেখতে এসেছিলেন। সেসময় তাকে নিয়ে যেতে বলা হলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে।’
তিনি জানান, কিছুটা সুস্থ হলে মাকে নিয়ে যাবেন বলেন আশ্বাস দিয়েছিলেন সন্তানরা। কিন্তু এরপর তারা কোনও রকম যোগাযোগ করেননি।
মিলটন বলেন, ‘বর্তমানে বৃদ্ধা আম্বিয়া খুবই অসুস্থ। মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করছেন। সুচিকিৎসা দেয়া হলে হয়ত একটু সুস্থ হতেন। বিষয়টি সন্তানদের জানিয়েছি। বারবার ফোন করা হলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা আসতে চাননি।’
‘বুধবার ভোরে পরে দুই ছেলে, ছেলের বউসহ পাঁচজন এসেছিলেন। আমরা বেশ কয়েকবার বলেছি তাদের মাকে নিয়ে যেতে। তারা রাজি হননি। উল্টো যাওয়ার সময় বলে গেছেন মা মারা গেলে আমরা যেন তাদের খবর দিই। তারা এসে মরদেহ নিয়ে যাবেন।’
এ প্রতিবেদক বিষয়টির অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচয় গোপন রেখে আম্বিয়াকে তারই এক নাতনী ওই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান। তার ছয়মাস পর দুই ছেলে ও নাতনীরা এসে বৃদ্ধা আম্বিয়ার একবার খোঁজ নেন এবং তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তারা বৃদ্ধাশ্রমে ওই নারীর আর কোনও খোঁজখবর নেননি।
বৃদ্ধাশ্রমের লোকজন বলছেন, সন্তানদের এমন অবহেলার পরও পরিবারের প্রতি টান একটুও কমেনি বৃদ্ধা আম্বিয়ার। বারংবার ছেলে মেয়েদের নাতি-নাতনিদের দেখার আকুতি জানান তিনি। এরপর বৃদ্ধাশ্রম থেকে তার পরিবারের বারবার খবর দেয়া হলেও উল্টো তারা বিরুপ আচরণ দেখান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃদ্ধার পুত্রবধু আমাদের হুমকি দিয়ে বলেছেন আবার তাকে (আম্বিয়া) নিয়ে যেতে ফোন করা হলে শাশুড়িকে অপরহরণ করা হয়েছে বলে থানায় মামলা করবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।