ওমর ফারুক হিমেল: শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ফেসবুক পেজে পোস্ট করা দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় ফেসবুক পেজে পোস্ট করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার ‘
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আগত যাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ১৬ এপ্রিল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।’
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনেকে রিয়েক্ট, কমেন্ট ও শেয়ার করতে থাকেন। অধিকাংশ কমেন্টে ইপিএস কর্মীরা তাদের হতাশা প্রকাশ করেন। নোটিশটি নানা ফেসবুক গ্রুপে শেয়ারও করেন অনেকেই। কেউ কেউ দূতাবাস ও বোয়েসেল নিয়েও মন্তব্য করেছেন।
শাহীন হোসাইন নামে একজন রি-এন্ট্রি (কমিটেড) কর্মী লিখেছেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব কি ?? দেড় বছর ধরে অপেক্ষায় রেখে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই হতাশায় ডুবালেন! কমিটেড কর্মীদের দোষ বা দায়ভার কি? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটেড কর্মীদের ভিসা প্রদান করার ব্যবস্থা নিন।’
মিয়া মোহাম্মদ বাবুল নামে একজন লিখেছেন, ‘জনাব দয়া করে কোরিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ব্যবস্থা করুন।’
মেঘ বালক নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি কমিটেড ওয়ার্কার। দেশে এসেছি প্রায় ১৫মাস। কোরিয়া যাবো ভেবে কিছুই করা হয়নি এই ১৫ মাসে। কিছু দিন আগে আমার নাম আসে বোয়েসেলে। অনেক খুশি হয়ে ছিলাম। আজ নিষেধাজ্ঞা দেখে অনেক খারাপ লাগছে। তবে আল্লাহ্ ভরসা ধৈর্য্য ধরে আছি একদিন হবে ইনসআল্লাহ। সবাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে কোরিয়া সরকার আমাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আর আমরা যেন সবাই কোরিয়া যেতে পারি ‘
সুমন আহমেদ নামে এক কর্মী লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা নিম্নমানের এর দ্বারা প্রমাণিত হয়!!! আবারো কপাল পুড়ল ইপিএস যোদ্ধাদের!!!’
শাকিল মাহবুব নামে একজন লিখেছেন, ‘একটু বিষ দেন আমাদের আমরা খেয়ে মরে যাই। না হয় আমাদের সিসিভিআই হয়ে আছে যাদের একটি বছর ধরে আমাদের দোষ কোথায় বলেন।’
রনি জামান নামে একজন লিখেছেন, ‘অনেক কিছু বলার ছিলো, অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু বলতে পারিনা।তারপরেও কিছু কথা না বললে বিবেকের কাছে ছোটো হয়ে যেতে হয়….. আচ্ছা, কোরিয়াতে কি হাজার হাজার লোক যাচ্ছে এখন? যে এতো লোকজন যাওয়ায় আপনারা তাদের সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারছেন না বা ম্যানেজ করতে পারছেন না। যে কারণে হয়তো দু’একজন পজেটিভ রোগী বের হয়ে যাচ্ছে! আরে ভাই, লোকজন এখন যেতে পারছেই হাতে-গোনা দু-চারজন। এই দু-চারজন লোককে দায়িত্ব নিয়ে পাঠাইতে পারেন নাই! ভিসা ইস্যু হওয়ার পরেও ফ্লাইট জটিলতায় হাজার হাজার কর্মী যখন কোরিয়ায় যেতে পারছেনা, সেখানে এই জরুরি মুহূর্তে কারা যাচ্ছে তাইলে কোরিয়ায়? কারা গিয়ে করোনা পজেটিভ হচ্ছে? কিভাবে যাচ্ছে এরা? এরা ভিআইপি হউক, স্টুডেন্ট হউক, বিজনেস ম্যান বা ওম্যান হউক, সেটা বড় কথা নাতো। কথা হইলো, এরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? পরপর দুইবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা পড়ায় আপনাদের কি লজ্জা করেনা একটু’ও? নাকি লজ্জা পাবার মতন লজ্জাও অবশিষ্ট নাই এখন আপনাদের? হাজার হাজার ছেলে-মেয়েদের স্বপ্নের কফিনে প্যারাক ঠুকে দিচ্ছে যারা বারবার,তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
ফয়সাল মনসুর নামে আটকেপড়া একজন লিখেছেন, ‘বোয়েসেলের সকল সরকারি কর্মচারীগণ ভাবছে তারা যা করবে তাই হবে। তারা এটা জানে না যে জনগণ চাইলে সবকিছু করতে পারে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলে আমরা যারা ইপিএস শিক্ষার্থী রয়েছি, আমরা আজও ভদ্র আছি বলে আপনারা এখনও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। তবে এটা মনে রাখবেন ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। অন্যান্য দেশের যাত্রীরা ঠিকই যাইতেছে। আমরা এখনো ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আছি।’
মোশাররফ হোসেন নামে একজন রি-এন্ট্রি কমিটেড কর্মী লিখেছেন, ‘আপনারা কোরিয়ান সরকারকে যেইসব অঙ্গীকার করছিলেন সেগুলো যদি ঠিকভাবে পালন করতেন তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা আসতো না। এইবার কি বলে কোরিয়ান সরকারকে বুঝাবেন আপনারা। ৭০০ এর বেশি কমিটেড দেশে আটকে আছে , ৫ বছর শেষ করে ভালোভাবে দেশে ফিরে আসাটাই কি এদের কাল হলো।’
সাকিব খান নামে একজন লিখেছেন, ‘যারা গেলো এরা করোনা পজিটিভ নিয়ে কিভাবে গেলো এদেরকে উচিত দেশে পাঠিয়ে দেওয়া ! এরা ভবিষ্যৎ ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ নষ্ট করে দিলো !’
মিথুন নামে একজন লিখেছেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈষম্যের শিকার কিনা? অন্য দেশ থেকে কোরিয়াতে যাওয়া মানুষের মধ্যে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। কিছু কিছু দেশ বাংলাদেশের চেয়েও সংখ্যা বেশি।তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বার বার নিষেধাজ্ঞা কেন? আর এর প্রভাব বারবার কেন ইপিএস এর উপর পড়ছে? ইপিএস কর্মীদের আজ এক বছরের উপরে কোন ফ্লাইট নাই। তাহলে এর দায় ইপিএস কর্মীরা কেন নিবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই বিশেষ নিয়মে বিশেষ ফ্লাইটে ইপিএস কর্মীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।